নাবিলার জঙ্গি হয়ে ওঠার গল্প

স্টাফ রিপোর্টার: নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন হুমাইরা জাকির নানভি ওরফে নাবিলা। নর্থ সাউথে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করতে মালয়েশিয়ার লিংকন ইউনিভার্সিটিতে যান তিনি। সেখান থেকে দেশে ফিরেই নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা আকরাম হোসেন নিলয়ের যোগসাজসে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন নিষিদ্ধ ওই জঙ্গি সংগঠনের সিস্টার উইংয়ের প্রধান।
নব্য জেএমবির নিজস্ব যোগাযোগ রক্ষার অ্যাপসে ‘ব্যাট উইমেন’ নামে অ্যাকাউন্ট খোলেন নাবিলা। এরপর থেকে সংগঠনের সবাই তাকে ওই নামেই ডাকতে শুরু করেন।
নাবিলার উইংয়ে আরও ১০-১৫ জন নারী সদস্য কাজ করতেন। পৈত্রিক সূত্রে বিত্তবান হওয়ায় জঙ্গিবাদে বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগান দিতে থাকেন এই নারী।
নাবিলাকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) এক কর্মকর্তা।
তিনি জানান, নাবিলার স্বামী তানভির ইয়াসির করিমও জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত ১৯ নভেম্বর করিম ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার তানভীরকে গুলশান থেকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন। তানভীর গ্রেফতার হওয়ার পরই নাবিলার জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। তবে অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাকে এতদিন গ্রেফতার করা হয়নি।
যেভাবে জঙ্গিবাদে নাবিলা
নাবিলার বাবার নাম জাকির হোসেন। তিনি হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার মালিক। পারিবারিক সূত্রে তাদের অনেক টাকা-পয়সা, সম্পত্তি রয়েছে। দুই ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট নাবিলা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করেন।
নর্থ সাউথে পড়ার সময় নাবিলার সঙ্গে তাজরীন খানম শুভর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা আকরাম হোসেন নিলয় ছিলেন শুভ’র ভাই। সেই পরিচয়ে নিলয়ের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে নাবিলার। তাদের সঙ্গে মিশতে মিশতেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন নাবিলা।
অনার্স শেষ হওয়ার পর মাস্টার্স করতে মালয়েশিয়ার লিংকন ইউনিভার্সিটিতে যান নাবিলা। জঙ্গি নেতা নিলয়ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। মাস্টার্স শেষে দেশে ফিরে পুরোপুরি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন নাবিলা। তানভীরের সঙ্গে নাবিলার বিয়ে হওয়ার পর স্ত্রীর মাধ্যমে ধর্ণাঢ্য স্বামীও জড়িয়ে পড়েন জঙ্গিবাদে। দু’জন মিলে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করতে শুরু করেন।
হামলা বাস্তবায়নে দেড় লাখ টাকা দেন নাবিলা
২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শোক দিবসের কর্মসূচিতে যে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো, তাতে অর্থের যোগানদাতা ছিলেন নাবিলা। জঙ্গিনেতা নিলয়ের ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলেন তিনি।
গত ৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় বাবার বাসা থেকে হুমাইরা জাকির নানভি ওরফে ‘ব্যাট উইমেনকে’ গ্রেফতার করে সিটিটিসি। পরদিন শুক্রবার ১৫ আগস্ট হামলা চেষ্টার মামলায় তাকে আদালতে হাজির করা হলে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মুহিবুল ইসলাম বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে নাবিলাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শোক দিবসের কর্মসূচিতে যে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো, তাতে অর্থের যোগানদাতা ছিলেন নাবিলা।
তিনি আরও বলেন, নাবিলা নব্য জেএমবির অন্যতম অর্থদাতা। তাকে আদালতের মাধ্যমে দু’দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সে কিভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়লো, কতদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলো এবং কত টাকা সংগঠনে যোগান দিয়েছে- বিষয়গুলো জানার চেষ্টা চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকে নসাৎ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘আগস্ট বাইট’ অভিযান।
পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে আত্মঘাতী হয়ে মারা যায় জঙ্গি সাইফুল ইসলাম। সে খুলনার ডুমুরিয়া থানার নোয়াকাটি গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
ওই ঘটনায় ১৬ আগস্ট কলাবাগান থানায় একটি মামলা হয়। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে তানভির ইয়াসিন করিম ও আকরাম হোসেন খান নিলয় এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ সরবরাহকারী। তারা নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা। পরে পর্যায়ক্রমে তানভির ও নিলয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ।