সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে

গত শনিবার পালিত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এ দিবসটির সাথে জড়িয়ে আছে বিশ্ববাসীর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত অনেক হতাশাজনক তথ্য। বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যার অন্তত অর্ধেক অংশ অপরিহার্য স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর পূর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকছে। আরেকটি তথ্য এমন যে, স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে প্রতি বছর চরম দরিদ্র হয়ে পড়ছে ১০ কোটি মানুষ। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্সের (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে কঠিন অসুখ মোকাবেলা করতে গিয়ে বছরে ৬৫ লাখ মানুষ নেমে যাচ্ছে দারিদ্র্যসীমার নিচে, আর মানসম্মত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকছে ৫৫ ভাগ মানুষ। চিকিৎসাসেবার প্রশ্নে এই যখন বাংলাদেশের অবস্থা, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করেছিলো ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা : সবার জন্য,সর্বত্র’।

প্রতিপাদ্যটি শ্রুতিমধুর বটে,কিন্তু প্রশ্ন হল সবার জন্য এবং সর্বত্র স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বাস্তবায়িত করতে হলে যে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ও সদিচ্ছার প্রয়োজন,তা কি সংশ্লিষ্টদের রয়েছে? জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি অর্জনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে রয়েছে। টেকসই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার কাজটি সহজ নয় নিশ্চয়ই। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পরিষেবা সরবরাহ,স্বাস্থ্য প্রযুক্তি,তথ্য ব্যবস্থা,গুণগত মান,সর্বোপরি এ সংক্রান্ত শাসন ও আইন। সবচেয়ে বড় কথা,সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিষেবা নয়,এটা জনসংখ্যাভিত্তিক সেবা। ২০৩০ সালের মধ্যেই সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তবে এটাও খেয়াল রাখতে হবে,এটা নিশ্চিত করতে গিয়ে মানুষকে যেন বিপুল অর্থব্যয়ের মধ্যে পড়তে না হয়। সাধারণভাবে এ দেশের মানুষ,বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের অধিবাসীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা তো বটেই,সাধারণ মানের চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত থাকেন। বিপরীতে বিত্তশালী শ্রেণীটি দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য রাখে। চিকিৎসা খাতের এই বৈষম্যও দূর করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার এবং তা সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। অথচ এই অধিকার যথাযথভাবে ভোগ করতে পারছে না বিপুলসংখ্যক মানুষ। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে যেসব কথা উচ্চারিত হয়েছে।