অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই

 

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো কী হবে? নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে কি-না দেশবাসী যখন এমনসব জিজ্ঞাসার মুখোমুখি, তখন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথাটিই যেন ব্যক্ত করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন ভালো হবে না।’ দেশের রাজনৈতিক অতীত ও বিদ্যমান বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে সিইসির সাম্প্রতিক এই অনুধাবন-মন্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তাকে মনে করিয়ে দিয়েছে, যা অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হয়। বিশ্লেষকরাও মনে করেন, গণতন্ত্রের সুরক্ষা এবং সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সহিংসতামুক্ত এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প থাকতে পারে না।

দেশের কলহপ্রবণ রাজনৈতিক বাস্তবতায় শুধু দেশবাসী নন, ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা করছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই চায় না, জাতিসংঘ চায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায়, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশও চায়। কিছুদিন আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল সফরে এসে আগামী নির্বাচনই তাদের সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছিলো। প্রতিনিধি দলের নেতা জিন ল্যামবার্ট বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং ভোটাররা যাতে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার নিশ্চয়তাও তারা দেখতে চান।

কিছুদিন আগেও জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের ঘটমান পরিস্থিতির দিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখছি। আমাদের মূলনীতি হলো, এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে। জাতিসংঘ এমন একটা নির্বাচনই প্রত্যাশা করে। উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না- অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শুধু আন্তর্জাতিক মহল চায় না, দেশের অপরাপর রাজনৈতিক মহল, বিদ্বৎ সমাজ এবং সাধারণ জনগণও চায়। একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের কারণে বিগত দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। ফলে ওই রকম নির্বাচন আর না হোক, এটাই সবাই আশা করে। সিইসিও তার বক্তব্যে প্রকারান্তরে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টিই তুলে ধরেছেন। আন্তর্জাতিক ও দেশের জনগণের এই প্রত্যাশা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ ও অবকাশ থাকা সঙ্গত হতে পারে না।

অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠা বা মাঠ সমতল করা। এ দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। তিক্ত হলেও সত্য যে, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির একটি বিএনপি। দলটির অভিযোগ, হয়রানি, গ্রেফতার ও জুলুমের শিকার হয়ে নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছেন না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন স্থানে ভোট চাওয়া শুরু করলেও এ দলের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন এমনকি পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি করতে পারছেন না। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন মোটেই আমলে নিচ্ছে না। এ অবস্থায় কীভাবে নির্বাচনী সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে? আর নির্বাচনের পরিবেশই যদি না গড়ে ওঠে তবে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কীভাবে- এ প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। আর বিদ্যমান অবস্থায় নির্বাচনের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হওয়ারও যথেষ্ট কারণ আছে।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করলেই নির্বাচন হয়ে যাবে না, এর জন্য নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং নির্বাচনকালীন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারীও এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ইসির নীরবতাও প্রত্যাশিত নয়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইলে তার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে সরকার এবং ইসিকে। সব পক্ষকেই বুঝতে হবে, বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।