আমার ওষুধ কিনে দেবে কে

আতঙ্ক ও হতাশাগ্রস্ত হেলালের পরিবার : বারবার কাঁদছে হাসছে মেয়ে রিয়া

অনিক সাইফুল: ‘আমার আব্বু আসছে না কেন? আমার ওষুধ কিনে দেবে কে? আব্বু আমাকে খালি আম্মু আম্মু করে ডাকতো। এখন ডাকছে না।’ রিয়া এসব বলে বলে কাঁদছে। আবার নিজের অজান্তেই হাসছে সে। কিন্তু এখনও সে জানে না তার আব্বু আর কোনোদিনও ফিরে আসবে না। তেমন কোনো কিছুই রিয়া মনে করে রাখতে পারে না। তবে বাবার স্মৃতি বার বার তাকে তাড়া করে ফিরছে। নিহত হেলালের দুই মেয়ের মধ্যে রিয়া ছোট। সে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। কোনো কিছু মনে রাখতে পারে না। কিন্তু বাবার কথা সে ভুলছে না। বাবার আদর আর ভালোবাসার স্মৃতি কিছুতেই তার মন থেকে মুছছে না।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জুগিরহুদা গ্রামের মৃত একদিল বিশ্বাসের ছোট ছেলে হেলালুল ইসলাম হেলালকে গত শনিবার ৭ এপ্রিল উপর্যুপরি কুপিয়ে খুন করা হয়। পরদিন রোববার আলমডাঙ্গা থানায় তার প্রথম স্ত্রী রুশিয়া খাতুন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় একই গ্রামের ১০জনকে আসামি করা হয়। প্রধান আসামি জুগিরহুদার হাসিবুল হক বিশ্বাসের ছেলে মানিক বিশ্বাস। আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছে। পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো সময় আসামিরা ধরা পড়বে বলে আলমডাঙ্গা থানার ওসি আবু জিহাদ জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার জুগিরহুদায় হেলালের নিজবাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও কুলখানি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় হেলালের মেয়ে রিয়ার (১৮)। রিয়া বাড়ির গোয়ালঘরের পাশে বসে হাত ইশারা করে একটি চৌকি দেখিয়ে বললো ওখানে আমার আব্বু শুয়ে ছিলো। প্রতিবেশীরা জানালো ওই চৌকির ওপর হেলালের মরদেহে গোসল দেয়া হয়েছিলো। তা মনে করেই রিয়া ও কথা বলছে। রিয়া বললো আব্বু আমাকে আম্মু আম্মু করে ডাকতো। আর ডাকছে না। আব্বু আমার ওষুধ কিনে দিতো। ওষুধ কিনে দেবে কে? এসব একা একা বলে কাঁদছিলো রিয়া। এক ভাই আর দু’বোনের মধ্যে রিয়া মেজ। রিয়া বুদ্ধিতে কম বলে তাকেই বেশি বেশি আদর করতেন রিয়া। বাইরে থেকে বাড়িতে গেলেই আগে রিয়াকে কাছে ডেকে আদর করতেন। তাই রিয়া এসব ভুলতে পারছে না। কখনো হাসছে আবার কখনো কাঁদছে সে। বাড়ির অন্যান্য সদস্যের চোখেও কেবলই অশ্রু। কেউই কোনো সান্ত¦না খুঁজে পাচ্ছে না। হেলালকে নৃশংসভাবে খুন করার মতো কোনো কারণও কেউ খুঁজে পাচ্ছে না গ্রামের সাধারণ মানুষ।
হেলালের বড় মেয়ে শুক্লা বিবাহিত। সে এক পুলিশ অফিসারের স্ত্রী। শুক্লা এক সন্তানের জননী। স্বামীর চাকরির সুবাদে তাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকতে হয়। বাবার সংসারে কতোটুকু চোখ রাখতে পারবে সে। আগে সে পিতার ভালোবাসা পাওয়ার আশায় থাকতো। এখন তার ভালোবাসা পাওয়ার আশায় থাকবে তার ছোট ভাই সৌরভসহ পরিবারের সদস্যরা। সৌরভ এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। কিভাবে পিতা হত্যার শোক সামলে লেখাপড়ায় মন দেবে তা নিয়ে তার চোখেও হতাশার আঁধার। সে পিতা হত্যার সুষ্ঠু বিচার চায়।
গতকাল দুপুরে জুগিরহুদা গ্রামে গিয়ে জানা যায় আসামিরা সব পলাতক। তারা ঘরবাড়িতে তালা ঝুলিয়ে গাঢাকা দিয়েছে। কিন্তু হেলালের পরিবারসহ গ্রামে এখনও বিরাজ করছে মানিক আতঙ্ক। তারা মানিকসহ সব ঘাতককে দ্রুত গ্রেফতার দাবি করেছেন।