ফের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা : দুই মন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার: কোটা সংস্কার ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এক মাস আন্দোলন স্থগিত করা হলেও সোমবার কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও গতকাল মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বিতর্কিত বক্তব্যের পর আবারও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এর আগে সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তে বিভক্ত হয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের পর তারা আবারও সমন্বিত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

গত সোমবার কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী সংসদে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলায় ক্ষুব্ধ হয় আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষই। অনতিবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণাও দেয় তারা। এরপর গতকাল মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সচিবালয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) লভ্যাংশ প্রদান অনুষ্ঠানে আগামী বাজেটের পর কোটা সংস্কারে হাত দেয়া হবে বলে জানান, যা সরকারের আগের বক্তব্য থেকে ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘কোটা এখন যা আছে তা বোধহয় অনেক বেশি হয়ে গেছে। এটা সংস্কার করা উচিত। তবে কোটা থাকতেই হবে। সমাজে যারা পশ্চাৎপদ, তাদের জন্য কোটা থাকা উচিত। প্রশ্ন হচ্ছে কত শতাংশ থাকবে? আগামী বাজেটের পর কোটা সংস্কারে হাত দেয়া হবে।’

গণমাধ্যমে এ ঘোষণা আসার পরই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবার ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা গত সোমবার সচিবালয়ে তাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এটা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আর এ কারণেই তারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় সরকারের আশ্বাসে তারা আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে। মন্ত্রীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি তারা পালন করবেন। কিন্তু কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন তা অগ্রহণযোগ্য ও রুচিহীন। এজন্য বিকেল ৫টার মধ্যে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে তারা আবারও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। ধর্মঘটও চালিয়ে যাওয়া হবে। এর পরই দুপুরের পর অর্থমন্ত্রীর এ ঘোষণা তাদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে, এরপর সন্ধ্যা ৬টায় আবারও তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে সব পক্ষ মিলে একসঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এ সময় ক্লাস ও পরীক্ষাও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় তারা।

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষকরা যেভাবে কোটা আন্দোলন সমর্থন করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তেমন কোনো অবস্থান না নেয়ার কারণেও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তবে ঢাবি শিক্ষকরা বলছেন, ঢাবি ভিসির বাসভবনে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে সে কারণেই শিক্ষকরা একটু ভেবেচিন্তে অগ্রসর হচ্ছেন। গত সোমবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকের পর এক মাস আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হলেও বামছাত্র সংগঠনগুলোর একটি অংশ দাবি করে এটা আন্দোলনকে স্থিমিত করার কৌশল নেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে এখনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও তাদের ক্ষুব্ধ করেছে। আন্দোলন স্থিমিত হয়ে পড়লে সরকার কথা রাখবে না এমন সন্দেহ থেকে তারা গতকাল মঙ্গলবারও আন্দোলন চলমান রাখে। যার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন তারা। এর পাশাপাশি রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কের মোড়ে অবরোধ করেন স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। সোবহানবাগে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা, যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্থ-সাউথ (এনএসইউ) ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থীরা এবং রামপুরা ব্রিজের পূর্বপাশে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এতে গতকাল রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

এর আগে আন্দোলনের মূল অংশ দাবি করে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে যেহেতু আশ্বাস দেয়া হয়েছে সেহেতু তাদের সময় দেয়া উচিত। সরকার যদি কথা না রাখে তখন তারা আবারও রাজপথে নামবেন এবং তখন এক দফা দাবিতে আন্দোলন করবে। যা সরকারকেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে। কিন্তু দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের পর সে অবস্থান থেকে সরে এসে দুই পক্ষই সমন্বিত আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। এর পরই পুরো দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলন শুরু করেছেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান ও নুরুল হক নুর বিকেল ৫টায় ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা দিতে হবে। ঘোষণায় কবে নাগাদ কোটা সংস্কার করা হবে সেটি উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি এবং আহতদের সরকারি সহায়তায় চিকিৎসার দাবি জানান তারা। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অবরোধ, ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ দফায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। গত রোববার তাদের পদযাত্রা ও অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় ঢাকায় পুলিশ বাধা দিলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। ছাত্রলীগও হামলায় অংশ নেয়।