স্বাগত ১৪২৫ : সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা

সম্পাদকীয়

আজ পয়লা বোশেখ, শুভ নববর্ষ। সর্বজনীন উৎসবের দিন। বাংলার ঘরে ঘরেই শুধু নয়, আকাশে বাতাসেও আজকের সূর্য যেন ছড়িয়েছে রঙের ছটা। বর্ষবরণের দিনটি সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। বিদায় বছরের সকল গ্লানি মুছে যাক, নতুন বছর সকলের জন্য হোক সুন্দর এবং প্রত্যাশা পুরণের বছর। বর্ষবরণের রকমারি আয়োজনে ফুটে উঠুক ভালোবাসা।
নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, কৃষিভিত্তিক বাংলার মানুষের আনন্দ উৎসবের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ফসলের। আর নববর্ষের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ফসল বোনার আনন্দ। প্রকৃতিও সাজে নতুন সাজে। মুকুলে ভরে ওঠে ফলদ বৃক্ষ। চৈত্রের পাতাঝরার বিরহ শেষে বনভূমি সুশোভিত হয়ে উঠেছে নতুন পাতায়। দোয়েল, কোয়েল, কোকিল আর বউ কথা কও পাখির কূজনের মধ্য বঙ্গাব্দ নববর্ষ যেনো নতুন আনন্দের বান ডেকে আনে। মানুষের মনে সঞ্চারিত করে নতুন আবেগ। নতুন প্রেরণায় জেগে ওঠে মন, ফিরে পায় প্রাণশক্তি। তাইতো বাংলা নববর্ষ এমনই নবসৃজন আনন্দের, আবেগের। ফসলের মরসুম চিহ্নিতকরণ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে মুঘল শাসনামলে বাংলা পঞ্জিকার প্রবর্তন করা হয়। সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ প্রবর্তন করেন বাংলা সন এবং তা কার্যকর হয় তার সিংহাসন-আরোহণের সময় থেকে (৫ নভেম্বর ১৫৫৬)। হিজরি চন্দ্রসন ও সৌরবর্ষকে ভিত্তি করো বাংলা সন প্রবর্তিত হয়। ফসল বোনা এবং খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে প্রবর্তিত নতুন সনটি প্রথমে ফসলি সন নামে পরিচিতি হলেও পরে তা বঙ্গাব্দ নামে স্বীকৃত হয়। এ হিসেবে বঙ্গাব্দের ঐতিহ্য চার শতাধিক বছরের। এই অব্দ এখন মিশে গেছে জাতির অস্তিমজ্জায়। চৈত্রে রবিশস্য, বোশেখে বোরো ধান, জ্যৈষ্ঠে পাকা আম-কাঁঠাল, আষাঢ়-শ্রাবণে বর্ষা ও নদী জল ছল ছল, শরতে কাশবনে বাতাসের দোলা, অঘ্রাণে নবান্নের উৎসব, পৌষে পিঠাপুলির ধুম, মাঘে কনকনে শীত। এসবই আমাদের লোকায়ত জীবনধারার অতি পরিচিত অনুষঙ্গ। বঙ্গাব্দের প্রথম দিন তথা বোশেখের প্রথম দিনই চারশ বছর ধরে গ্রাম গ্রামান্তরে বটতলা, নদীপাড়ে, রাস্তার মোড়ে বসানো হয় মেলা। এ মেলা বোশেখি মেলা, যা বাঙালির প্রাণের মেলা।
বঙ্গাব্দ প্রথমদিনটি সর্বজনীন উৎসব। যে উৎসব সকল ধর্ম-বর্ণের সকল বাঙালিকেই এক কাতারে সামিল করে। এ দিনটি সত্যিই সহিষ্ণুতা, সদ্ভাব, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং বিবেক ও মনুষ্যত্বের দীক্ষা দেয়। বাংলা নববর্ষ আমাদের অন্তরকে বিকশিত করে, নিজের মাটিকে চেনায়, শেকড়ের সন্ধান দেয়। বয়ে আনে ভাতৃত্ববোধ। প্রতিষ্ঠা করে সম্প্রীতি। ১৪২৫ স্বাগতম। সকলকে আবারও প্রীতি ও শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।