আর্সেনিক দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গার একটি অন্যতম সমস্যা

‘আর্সেনিকের আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না চুয়াডাঙ্গাবাসীর’। দেশে আর্সেনিক কবলিত জেলাগুলোর মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এই জেলাটি অন্যতম। ২০০৩ সালের সরকারি জরিপ অনুযায়ী এই জেলার ২৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ নলকূপে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। আর এখন বলা হচ্ছে, এখানে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা ও রোগীর সংখ্যা ধারণার চাইতেও বেশি। এই জেলার বেশকিছু গ্রামে একসময় ছিলো ঘনবসতি। কিন্তু গত ২৫-৩০ বছরে আর্সেনিক আক্রান্ত হয়ে অনেকে মারা যাওয়ায় বহু মানুষ এসব গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। যারা নিরুপায় হয়ে বসবাস করছে তারা বলছে, এই গ্রামগুলোতে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী আসে না, হাসপাতালে পাওয়া যায় না ওষুধ। আবার ওষুধ পাওয়া গেলেও তা তাদের শরীরে কাজ করে না।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিখ্যাত চিকিত্সা সাময়িকী ল্যানসেটের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই সংখ্যাটি আরও বেশি ৫ কোটি ৭০ লক্ষের মতো। আমাদের দেশে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়ে। বর্তমানে প্রতি বছর এ সংক্রান্ত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। আতঙ্কের বিষয় হলো, অনেক এলাকায় নলকূপের পানি পরীক্ষা কিংবা আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্তেরই কোনো ব্যবস্থা নেই। ২০০২-০৩ অর্থবছরে যেসব নলকূপে সতর্কতামূলক লাল রঙ লাগানো হয়েছিলো, বর্তমানে তাও মুছে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানিতে স্বল্প মাত্রায় আর্সেনিক সর্বদাই থাকে। কিন্তু যখনই এটি স্বাভাবিক মাত্রার বেশি হয়, তখনই তা মানবদেহে নানা রকম রোগের উপসর্গ তৈরি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী এক লিটার পানিতে ১০ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকলে সেই পানি দূষিত বলে চিহ্নিত  হয়। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক সময় তা ৫০ মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে যায়। ফলে এর কারণে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার ও হার্টেরও নানা রোগ-ব্যাধি হতে পারে।

আর্সেনিকমুক্ত জীবন-যাপনের জন্য ভূ-গর্ভের চাইতে সারফেস ওয়াটার তথা ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের প্রতি সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এসব পানি যথাযথভাবে বিশুদ্ধ করার উপায়ও আমাদের আয়ত্ত করতে হবে। বৃষ্টি এবং নদী-নালা ও পুকুর-জলাশয়ের পানি কাজে লাগিয়ে আমরা আর্সেনিক দূষণ হতে নিরাপদ থাকতে পারি। এসব পানি চার চেম্বারের আর্সেনিক নিরোধক ফিল্টার এবং রজন পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা বিশুদ্ধ ও পানযোগ্য করতে পারি। এসব পদ্ধতি ও আর্সেনিক পরীক্ষার কিট সর্বসাধারণের জন্য সহজলভ্য করা একান্ত প্রয়োজন। একইসঙ্গে আর্সেনিকযুক্ত নলকূপে সতর্কতামূলক লাল রঙ লাগানোর কার্যক্রমও আবার শুরু করা উচিত।