তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব

 

বিদ্যমান মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স অ্যাক্ট কাজে লাগাতে পারে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নতুন করে তত্পরতা শুরু করেছে সরকার। তিনি বর্তমানে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বলবৎ রয়েছে। কিন্তু তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইনি বাধা থাকলেও বিদ্যমান মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স অ্যাক্টের আওতায় কূটনৈতিক তত্পরতার মধ্য দিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য সরকারের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় এ পথে এগুতে পারে সরকার।

অপরাধের দায়ে দণ্ডিত তারেক রহমানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে বলেন, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা ইতোমধ্যেই তারেক রহমানের প্রত্যর্পণের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও সে কিভাবে লন্ডনে থাকে? আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।

দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী অ্যাড. আনিসুল হক বলেছেন, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকলেও এ চুক্তি করতে তো বাধা নেই। তাছাড়া মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স অ্যাক্ট বলে একটা আইন আছে। সে আইনের আলোকে কিছু কিছু অপরাধীদের বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু আনতে পারি। সেই মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স অ্যাক্ট আমাদের দুই দেশেরই আছে। এটা কিন্তু জাতিসংঘের ধার্যকৃত একটা আইন। সেই সহযোগিতাও এই দুই দেশের মধ্যে আছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সাল থেকে তারেক রহমান সপরিবারে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একাধিক দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান। দীর্ঘদিন কারাগারে আটক থাকার পর জামিন পেয়ে তিনি চিকিত্সার জন্য ওই দেশে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তারেক রহমানকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এছাড়া অর্থ পাচারের একটি মামলায় ২০১৬ সালে তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। যদিও নিম্ন আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলো। এছাড়া ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে:

আসামি প্রত্যর্পণের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বর্তমানে কোনো চুক্তি নেই বাংলাদেশের। তবে ওই দেশের আসামি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০৩-এ বলা আছে, কোনো দেশ তার অভিযুক্ত আসামিদের ফিরিয়ে নিতে পারে। এজন্য দূতাবাস কিংবা সরকারের বিশেষ প্রতিনিধির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে হবে। ওই আবেদনের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, যদি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি জমা দিতে হয়। এছাড়া এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে ওই ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে না। এসব শর্ত পূরণের পরই ওই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবেদন আমলে নেবেন। তারপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য আদালতের অনুমোদন চাইবেন। আর গ্রেফতার হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। পরে পূর্ণাঙ্গ শুনানির পর আদালত আসামি প্রত্যর্পণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। সিদ্ধান্ত আসামির বিপক্ষে গেলে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ পাবেন। ফলে কাউকে প্রত্যর্পণ বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেয় আদালত। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, বিএনপি নেতা তারেক রহমান উদ্বাস্তু হিসেবে এদেশে (বৃটেন) বসবাস করছে। সে ইতোমধ্যে তার বাংলাদেশী পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সারেন্ডার করেছে। শনিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য শাখা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।