গাংনীর কষবা গ্রামের সেই নারীর পিছু ছাড়েনি মুদি দোকানী রাফিউল : মামলা হলেও গ্রাম্য মাতবরদের দৌরাত্ম

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা কষবা গ্রামের সেই নারীর পিছু ছাড়েনি মুদি দোকানী রাফিউল ইসলাম। তার স্বামীকে হত্যা করে হলেও নারীকে কাছে চাই রাফিউল। প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা ও থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। তবে মামলা ও অভিযোগ তোয়াক্কা না করেই গ্রাম্য সালিশের নামে মাতবরদের দৌরাত্ম চরমে পৌঁছেছে। এর আগে একই ঘটনায় বিচার উদ্দীন ও শুকুর মীরসহ কয়েকজন মাতবর জরিমানার অর্থ আদায় করে আত্মসাত করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, ধানখোলা ইউনিয়নের কষবা গ্রামের মুদি দোকানী রাফিউল ইসলামের সাথে প্রতিবেশী মধ্য বয়সী এক নারীর সাথে পরকিয়া সম্পর্ক হয়। গত বছরের ১১ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে রাফিউলের বাড়ির পাশে ঝোড়ের মধ্যে দু’জনকে আপত্তিকর অবস্থায় আটকের দাবি করেন গ্রাম মাতবর বিল্লাল হোসেন বিচার ওরফে বিচার উদ্দীনের ছেলে লাল চাঁদসহ কতিপয় যুবক। পরকিয়া প্রেম ও ব্যাভিচারের অভিযোগে ওই নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তার স্বামী। রাফিউলও আত্মগোপন করে। জনশ্রুতি রয়েছে ওই রাতেই দু’জনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে লাল চাঁদসহ তার সঙ্গীরা রাফিউলকে পালাতে সহায়তা করে। পরদিন গ্রামের তেঁতুলতলা মোড়ে শালিস বসে। বিল্লাল হোসেন বিচার, সাবেক ইউপি সদস্য শুকুর মীর, গোলাম বিশ্বাস, মোজাম মহুরা ও ভাটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক হাসান আলীসহ গ্রামের মাতবররা শালিসে বসেছিলেন। রাফিউলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয় সালিশ সভা থেকে। জরিমানার অর্থ বিচার উদ্দীন ও শুকুর মীরসহ কয়েকজন মাতবর পকেটস্থ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এদিকে স্ত্রীর ভুল স্বীকার ও আত্মীয় স্বজনদের অনুরোধে ঘটনার কয়েক দিন পরেই ওই নারীকে ঘরে তুলে নেন তার স্বামী। কিন্তু রাফিউল তার পিছু ছাড়েনি। মোবাইলে নারীকে হুমকি দিতে থাকে। ভুক্তভোগী নারী বলেন, পথের কাটা সরাতে আমার স্বামীকে যেকোন মূল্যে হত্যার হুমদি দেয় রাফিউল। এরপরে আমাকে নানাভাবে কু-প্রস্তুাব দিতে থাকে। সম্প্রতি এক রাতে রাফিউল আবারো আমার ঘরে ওঠে। এসময় আমার স্বামী ও ছেলেদের প্রতিরোধে সে পালিয়ে যায়। বিষয়টি গ্রাম্য মাতব্বরদের অবগত করি। কিন্তু বিচার উদ্দীন ও সাবেক ইউপি সদস্য শুকুর মীর রাফিউলের কাছ থেকে আবারো মোটা অংকের টাকা নিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়। নিরুপায় হয়ে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করি। অপরদিকে, প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে আমার স্বামী গাংনী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু শুকুর মীর ও কয়েকজন মাতবর পুলিশকে ম্যানেজ করে অভিযোগে ধামাচাপা দিয়েছে। অভিযোগ তদন্তের ভার ছিলো এএসআই আবু হানিফের উপর।

জানতে চাইলে এএসআই আবু হানিফ ওই গ্রামের বিচার উদ্দীন ও শুকুর মীরসহ মাতবরদের দৌরাত্বের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি কয়েকদিন গিয়েছি কিন্তু রাফিউলের দেখা পায়নি। শুকুর মীরসহ কয়েকজন মিমাংসার প্রস্তাব দিয়েছিলো। মিমাংসা যেহেতু হয়নি তাই ব্যবস্থা নেবো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কষবা গ্রামের ওই শালিসপতিদের কয়েকজন জরিমানার ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। কারো কোন সমস্যা হলেই এগিয়ে যান তারা। সামাজিক বিচারের নামে জোরপূর্বক আদায় করা হয় জরিমানা। ওই টাকা শালিসপতিরা পকেটস্থ করেন। যার প্রতিফলন ঘটেছে রফিউল এবং ওই গৃহবধুর বিচারে।

অভিযোগ রয়েছে, গ্রামের নিরিহ প্রকৃতির মানুষদের পুলিশের ভয় দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে টাকা। সম্প্রতি বন্দুকযুদ্ধে জমশেদ নিহত হলে শুকুর মীরসহ কয়েকজন মাতবর আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামের কিছু অসহায় মানুষকে জমশেদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মিথ্যা অভিযোগ তুলে টাকা আদায়ের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ চক্রের হাত থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি পেতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ঠ দফতর প্রধানদের দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

তবে অভিযোগের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাফিউল ও দুই মাতবরের খোঁজে ওই গ্রামে গেলেও সাংবাদিকদের সামনে আসেননি তারা। গা ঢাকা দেয় রাফিউল।