শিশু সে নিজেরই হোক আর অন্যেরই হোক নির্যাতনের এখতিয়ার কারো নেই

নিজের শিশু সন্তানের পোশাকে কলমের কালি ছুড়ে মেরেছে বলে অন্যের শিশু সন্তানকে কি ধমক দেয়া যায়? ধমকও যেখানে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেখানে ঘাড়ে ধাক্কাই শুধু নয় মাথায় তুলে আছাড় মেরে গুরুতর আহত করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী শিশু সহপাঠীদের অভিযোগ, কিল ঘুষিসহ লাথি মারার সময় ভয়ানক রূপে ছিলেন সাহেব আলীর আব্বা মিজান। আহত শিশু আশিকুলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তিও করতে হয়। দিতে হয় চিকিৎসা।
নিজে বাবা হওয়ার আগে যেমন বাবার কাছে নিজের অবস্থান সম্পর্কে যেমন স্পষ্ট হওয়া যায় না, তেমনি একজন বাবার কাছে তার সন্তান কতোটা আদরের তাও পরিপূর্ণভাবে বোধকরি উপলব্ধিতে আসে না। অবশ্য কেউ কেউ নিজের সন্তান নিয়ে এতোটাই মসগুল থাকেন যে, তিনি যার সন্তান তাকেও ভুলে যান বেমালুম। অন্যের সন্তানের প্রতি দরদি দৃষ্টি? সে তো অবান্তর। তা না হলে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি মাদরাসাপাড়ার মিজান কি তার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছেলের সহপাঠীকে মেরে আহত করতে পারতেন? ধিক এ ধরনের মানসিকতা লালনকারীদের। যদিও শুধু ধিক্কার দিয়ে এদের বিবেক জাগানোর চেয়ে উচিৎ শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। যে শিক্ষা দেখে মিজানের মতো মানসিকতা লালনকারীদের বিবেকও জেগে উঠবে। ঘটবে না শিশু নির্যাতনের ঘটনা।
না, ঘটনাটিকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা উচিৎ নয়। বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মিলেমিশে খেলবে, মনমালিন্য হবে আবার মিটিয়েও নেবে। ওদের মধ্যে নাক যদি কারো গলাতেই হয় তা হলে নিজের ও অন্যের ছেলের প্রতি সমান দরদি দৃষ্টি দিয়ে নাকগলানো উচিৎ। অসহনীয় কিছু হলেও নিজের হাতে আইন তুলে না নিয়ে অপর শিশুর পিতার নিকট নালিশ করে সুধরে নেয়ার উপায় খোঁজাও একটি পন্থা। প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণও দাবি করা যেতে পারে। তা না হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছে, রয়েছে সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে পুলিশ। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সাহেব ও আশিকুলের মধ্যে যা হয়েছে তা মিটমাটের বদলে মিজান যা করেছেন তা খাটো করে দেখলে তার খেসারত সমাজকেই দিতে হবে।
সমাজের সকলে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করলেও পেশিশক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা সকলের যেমন সমান থাকে না, তেমনই পেশিশক্তি থাকলেই তার প্রয়োগ করে পশুত্বের প্রকাশও ঘটান না সকলে। তাছাড়া জাতির সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই শিশুদের প্রতি সকলেরই যতœবান হওয়া নাগরিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সে কারণেই নিজের সন্তানকেও যখন নির্যাতনের এখতিয়ার আইনে নেই, তখন অন্যের সন্তানকে মেরে বিবেকহীনের পরিচয়দাতা পার পাবেন কেন?