হাসপাতালের চিকিৎসক লাঞ্ছিত ভাঙচুর : পুলিশের সাথে সংঘর্ষ

চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত যুবকের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে তুলকালাম

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাজমুল হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে ভাঙচুর ও চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে শুনে দ্রুত পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছায়। পুলিশের ওপরও চড়াও হয় ভাঙচুরকারীরা। শুরু হয় সংঘর্ষ। এক পর্যায়ে ওয়ার্ডের বাইরে লাঠিচার্জে অন্য রোগীর কয়েকজন আহত হয়। রাত ৯টা থেকে দেড়-দু ঘণ্টা ধরে চলে এ ঘটনা।

ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে পুলিশ আটক করলেও ওরা হামলা চালায়নি বরঞ্চ হামলা রোধে সহায়তা করেছে বলে চিকিৎসকদের তরফে লিখিতভাবে জানানোর পর রাতেই তাদেরকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনার পর থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান ব্যাহত হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন রোগী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসক না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জুগিরহুদার আব্দুল হামিদ ওরফে ডা. হকের ছেলে ফাইম মোর্শেদ ফাইম ঢাকার একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ায় বসবাস করে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলযোগে শহরে কাজে বের হয় ফাইম। রাত আনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে কলেজ রোডের হাসপাতাল মোড়ের নিকট বিপরীতমুখি মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আছড়ে পড়ে ফাইম আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। খবর দেয়া হয় তার বড় ভাইসহ বন্ধুবান্ধব ও নিকটজনদের। নিকটজনেরা দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেখে ফাইম জরুরি বিভাগে। অপর দু রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ফাইমের বড় ভাইসহ বন্ধুবান্ধব চিকিৎসককে গালিগালাজ করে ফাইমকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে বলে। কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ লিখে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে পাঠান। ওয়ার্ডে সিনিয়র স্টাফ নার্স শিউলি পারভীন চিকিৎসকের লিখে দেয়া ওষুধের নাম সট স্লিপে লিখে বাইরে থেকে আনতে বললে রোগী ফাইমের সাথে থাকা লোকজন ভাঙচুর শুরু করে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও ছুড়তে থাকে। একই সাথে তারা জরুরি ওয়ার্ডে ফিরে চিকিৎসককে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে যায় ওয়ার্ডে রোগী সাইমের শয্যাপাশে। অপরদিকে খবর দেয়া হয় পুলিশে। শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনাচার্জ এসআই আবুল খায়ের সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছুলে যুবকদের সাথে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পুলিশ পড়ে বেকায়দায়। খবর দেয়া হয় পুলিশের পদস্থ কর্মকতার কাছে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএ মামুন উজ্জামান ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাসপাতালের সকল গেট বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বহিরাগতদের শনাক্তকরণের কাজ শুরু করেন। অপরদিকে আগে পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছুতে থাকেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম বেনজীর, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত হোসেন, ডিবি ওসি ইউনুস আলী ও একদল পুলিশ অফিসারসহ সঙ্গীয় ফোর্স। অপরদিকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। চুয়াডাঙ্গা বিএমএ সভাপতি মার্টিন হীরক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা. পরিতোষ কুমার ঘোষসহ অন্যরাও উপস্থিত হন। এর মাঝে পুলিশের একট দল হাসপাতাল অভ্যন্তরের চিকিৎসাধীন রোগীর কয়েকজন লোকের ওপর লাঠি চালায়। এতে আহত হয় চুয়াডাঙ্গা সিঅ্যান্ডবিপাড়ার স্বপন বিশ্বাসসহ কয়েকজন। স্বপন বিশ্বাস রক্তাক্ত জখম হয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ উদ্দীন দুদুসহ অনেকে। পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা জানিফ ও সাজুকে আটক করে। চিকিৎসকেরা অবশ্য লিখিতভাবে জানান, এরা হামলা ভাঙচুর বা চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করেনি। বরঞ্চ দুজনই হামলাকারীদের প্রতিরোধে সহায়তা করেছে। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ দুজনকেই ছেড়ে দেয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হোসেন ঘটনার পর দায়িত্বপালনে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। ফলে তার পরিবর্তে ডা. হাসনাত পারভেজ শুভকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ বলেন, কথায় কথায় হামলা, চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটছে। এভাবে হামলা লাঞ্ছিতের শিকার হলে চিকিৎসকেরা চিকিৎসাসেবা দেবেন কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবটা অবশ্য গতরাতে অস্পষ্টই থেকে গেছে।