সম্পাদকীয়

খাদ্য উৎপাদনে কৃষকের অনাগ্রহ : সর্বনাশ অনিবার্য

কৃষিপ্রধান দেশে কৃষি উৎপাদিত পণ্যের কোনোটিতে লাভ হচ্ছে, কোনোটিতে গুনতে হচ্ছে লোকসান। সেদিকে বিশেষ নজরে ঘাটতি মানেই দেশের ক্ষতি ডেকে আনা। বিশেষ করে লোকসানের কারণে ধান-গম উৎপাদনে আগ্রহ হারালে ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যায়। যার বোঝা চাপে গোটা জাতির ঘাড়ে।

অবশ্যই বর্তমান সরকারের আমলে কৃষকদের সারের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয় না। সার নিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে কৃষককে মরতেও হয় না। সে কারণে দেশের কৃষিমন্ত্রী গর্ব করেই বলেন, আগে সারের জন্য ছুটতে হতো কৃষককে, এখন সারই ছোটে কৃষকের কাছে। কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিমন্ত্রীর সাফল্যগাথা উক্তি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে নানা কারণেই কৃষি উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত দাম না পেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রায়ই প্রকাশিত হয়। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় ‘আমনে লোকসান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের হালচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

খাদ্যে আমরা তথা আমাদের দেশের কৃষকরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বলে মাঝে মাঝেই দাবি করা হয়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কারণে ঘটা করে ধান চাল আমদানি করতে না হলেও বাজারে পড়শি দেশের চালের আধিক্য কেন? এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য গোলমেলে। অবশ্যই কৃষিপ্রধান দেশে কৃষি উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য যাতে কৃষকদের হাতে পৌঁছায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। এতে ঘাটতি দেখা দিলে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত পণ্যে লোকসানের কারণে তাতে আগ্রহ হারাতে পারে। কৃষি উৎপাদনে অনাগ্রহ দেশের অগ্রযাত্রায় অবশ্যই অন্তরায়। খাদ্য উৎপাদনে অনাগ্রহ সর্বনাশ অনিবার্য।

কৃষিপ্রধান দেশে কৃষি উপকরণ সহজলভ্য হতে হবে। বীজ, সার ও কীটনাশক হতে হবে ভেজালমুক্ত। সেচ? অপচয় রোধে যেমন সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, তেমনই স্বল্প ব্যয়ে সেচ ব্যবস্থা গড়তে মাঠকে মাঠ বিদ্যুতের আওতায় নিতে হবে। মনে রাখতে হবে- কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে।