ঝিনাইদহে পুলিশ পরিচয়ে একের পর এক খুন গুম এবং

গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে একজন কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে গেলো, পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে পারলো না। কয়েকদিনের মাথায় পাওয়া গেলো লাশ। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকায় কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় একই রকমের ঘটনা ঘটেছে কয়েকটি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, এসব রোধে কি পুলিশের ব্যর্থতা? নাকি আড়ালে সুক্ষ্ম সহায়তা? জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে যে পুলিশ সেই পুলিশেরই পরিচয় ব্যবহার করে একের পর এক অপহরণ, গুম, খুন। অথচ পুলিশ? পুলিশের ব্যর্থতার তেমন কৈফিয়ত তলবেরও নজির মিলছে না। ফলে দিন দিন পুলিশের ওপর আস্থাহীনতা বেড়েই চলেছে।

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ঈশ্বরা গ্রামের কলেজছাত্র সোহানুর রহমান সোহান তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। বিকেলে তাকে তুলে নেয়া হয় ডিবি পরিচয়ে। অপহৃত কলেজছাত্রের পিতা আইনের সহায়তাই শুধু চাননি, তিনি হন্যে হয়ে ঘুরেছেন, ছেলেকে সুহালে ফেরত পেতে হয়েছেন ছুটেছেন দ্বিগবিদিক। হাঁপিয়ে ওঠার এক পর্যায়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন। সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ছেলে কোনো রাজনীতির সাথে থাকে না। তাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। ছেলে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে তাকে আইনে সোপর্দ করা হোক। আইনের দৃষ্টিতে বিচার হোক। অন্যথায় তাকে যদি কোনো সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীরা ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ব্যবহার করে তুলে নিয়ে থাকে তাহলে পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করে ছেলেকে উদ্ধার করুক। না, এসব আবেদন নিবেদন, আকুতি কাজে লাগেনি। কলেজছাত্র সোহানের লাশ গতপরশু বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের খাড়াগোদার চান্নাতোলার মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে একই উপজেলার দুজনকে একই পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর কয়েক সপ্তাহ পর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় যশোরে জেলার সীমান্তে। একের পর এক অপহরণ ও খুনের পর গতকাল যখন আরো এক কলেজছাত্রকে একই পরিচয়ে তুলে নেয়া হয় তখন কলেজছাত্ররা আর বসে থাকেনি। তারা রাস্তায় নেমেছে। সড়ক অবরোধ করে রেখে দাবি তোলে, তাদের সহপাঠীকে ফেরত দাও, নচেত এখন থেকেই আন্দোলন শুরু। অবাক হলেও সত্য যে, অবরোধের এক পর্যায়ে অপহৃত কলেজছাত্রকে পাওয়া গেছে ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে। তাকে অপহরণের পর এমন ভয় দেখানে হয়েছে যে, সে আর মুখই খুলছে না। কারা কেন অপহরণ করেছে তা সে না বললেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশ এসবের দায় এড়াবে কীভাবে?

দীর্ঘদিন ধরে সারাদেশেই ভিন্নমতালম্বী রাজনৈতিক আদর্শের বহু নেতাকর্মীর অন্তর্ধান ধন্দেবন্দি থাকলেও সন্দেহের তীর ক্ষমতাসীনদের দিকে যেমন বাড়ছে, তেমনই পুলিশও চরম ইমেজ সঙ্কটের শিকার হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মাঝে শঙ্কা যেমন বাড়ছে, তেমনই পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বারুদের মতো ফুঁসছে। যা জাতির জন্য কল্যাণকর নয়, ফলে এ ধরনের অপহরণ, গুম, খুন অবিলম্বে বন্ধ করতে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ জরুরি। পুলিশই জনগণের আশ্রয়স্থল, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিয়জিত। পুলিশই যদি বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচালে পড়ে, হয় সন্দেহজনক- তাহলে বাকি থাকে কী? অবিলম্বে প্রতিকার প্রয়োজন।