হত্যাকাণ্ডের রহস্য ও রহস্য উদঘাটন করতে হবে

এবার নিহত হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এএসএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী। ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাস ধরার জন্য নিজ বাড়ি বোয়ালিয়া থানার শালবাগান বাজার এলাকার মোড়ে অপেক্ষা করছিলেন যখন, তখন মোটরসাইকেলযোগে দুই যুবক এসে পেছন দিক থেকে তাকে কুপিয়ে খুন করে। স্মরণ করা যেতে পারে, এর আগে গত দশ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষক খুন হয়েছেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি ড. ইউনুস জেএমবি ক্যাডারদের হাতে খুন হন ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে; ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিবির ক্যাডারদের হাতে খুন হন ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. তাহের আহমেদ এবং দুই বছর আগে খুন করা হয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সফিউল ইসলামকে।

রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কেন হত্যা করা হলো, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি, যদিও রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডের সাথে মৌলবাদের যোগসূত্র থাকতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেন একের পর এক এভাবে নিহত হচ্ছেন, তা এক প্রশ্ন বটে। নিহত রেজাউল করিম আপাতদৃষ্টিতে ছিলেন এক নির্বিরোধ ব্যক্তি। তিনি সুন্দরম নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন এবং একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছিলেন উপদেষ্টা। তিনি ভালো সেতারও বাজাতেন। এমন একজন বিদগ্ধ ব্যক্তির খুন হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিকই বলতে হবে। তবে কি বিষয়টি এমন যে, বিশেষ কোনো শত্রুতাবশে নয়, সাধারণভাবে বুদ্ধিজীবী হিসেবেই টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা? ড. ইউনুসকে হত্যার দায় স্বীকার করেছিলো জেএমবি, ড. তাহের আহমেদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিবির ক্যাডারদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। সফিউল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের পর আনসার উল বাংলাদেশ-২ নামের একটি সংগঠন ফেসবুকে নিহত শিক্ষককে মুরতাদ আখ্যা দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছিলো। সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডটি কি আরএমপি কমিশনার যেমনটা বলেছেন, তেমন কিছু?
কোনো হত্যাকাণ্ডের পর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়- নিহত ব্যক্তির ব্যক্তি জীবন নিয়ে এমন কিছু বলা হয়, যা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বের করার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি করে। কখনও কখনও খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এ কাজটি করে থাকে। যেকোনো হত্যাকাণ্ডের রহস্য ও রহস্য উদঘাটনে নির্মোহ অবস্থান নিতে হবে। হ্যাঁচকা টানে যা খুশি তা বলার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। নিহত রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডটির রহস্যও বের করতে হবে অতি সতর্কতার সাথে। শনাক্ত করতে হবে হত্যাকারীদের। দ্বিতীয় কথা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেন একের পর এক টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন, রাজশাহী অঞ্চলে মৌলবাদের বিস্তার কতোটা- ইত্যাদি বিষয়ও গবেষণার দাবি রাখে। আমরা অবিলম্বে সিদ্দিকীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর তাগিদ দিচ্ছি।