কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি যেন না থাকে

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষক ধান উত্পাদন করে, কিন্তু ন্যায্য মূল্য পায় না-এমন অভিযোগ অনেক দিনের। এক মণ ধান উত্পাদন করতে সেচ, সার ও পারিশ্রমিক মিলিয়ে যে খরচ হয়, মরসুমে এক মণ ধানের দাম তার চেয়ে কম থাকে। এ সময় বাজারে ধানের দাম কমিয়ে রাখার জন্য নানা রকম সিন্ডিকেট কাজ করে বলেও জানা যায়। ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কারণে অনেক কৃষকই এখন ধান উত্পাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কৃষককে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই প্রতিবছর উত্পাদন মরসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের কর্মসূচি নেয়া হয়। এবারও সেই কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। আগামী ৫ মে থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়ে চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এ অভিযানে মোট সাত লাখ টন ধান এবং ছয় লাখ টন চাল কেনা হবে। ধানের সংগ্রহমূল্য এক টাকা বাড়িয়ে ২৩ টাকা করা হয়েছে। যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হয় তাহলে আমাদের বিশ্বাস, এ কর্মসূচিতে তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।

এরই মধ্যে অনেক এলাকায়ই বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে। কোনো কোনো এলাকায় আরো সপ্তাহখানেক আগেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। সেচের পানি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সারের বকেয়া টাকা কিংবা ধার-দেনা পরিশোধের তাগাদা থাকায় কৃষক ধান ওঠার পরপরই তা বিক্রি করে দেয়। অনেক সময় কৃষক ক্ষেতেই ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। অথচ সংগ্রহ অভিযান শুরু হতে আরো দিন দশেক বাকি। কাজেই অনেক কৃষক এ সংগ্রহ অভিযানের সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। তাই ভবিষ্যতে সংগ্রহ অভিযান শুরুর সময় আরো এগিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। তার পরও এবার সংগ্রহ অভিযানে ধান ক্রয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় তা কৃষককে বেশি উপকৃত করবে বলেই মনে করি। গত বছর সরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল ও এক লাখ টন ধান কেনা হয়েছিলো। আমাদের ধারণা, তাতে চালকল মালিকরাই বেশি উপকৃত হয়েছিলো। এ বছর ধান বেশি কেনার ফলে কৃষকরা সরাসরি উপকার বেশি পাবে।

প্রতিবছর ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে দুর্নীতি ও অনিয়মের বহু অভিযোগ পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের এখানে যুক্ত করেন এবং কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাপ ও অর্থ লেনদেনেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি যেন না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। আমরা আশা করি, ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সত্যিকার অর্থেই কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় সক্ষম হবে এবং কৃষক আরো বেশি ধান উত্পাদনে উৎসাহিত হবে।