মেহেরপুরকে সজনে গ্রাম করা হচ্ছে

 

মহাসিন আলী: প্রচলিত আছে- ‘সজনের ডাটার ঝোল খেলে শরীরে রোদ লাগে না’। কথাটা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত তা না জানলেও শীত শেষে গরমকালের সবজির মধ্যে সজনের ডাটা একটি অন্যতম সবজি। যার তরকারি ছোট-বড় সকলের কাছে অতি প্রিয়। মাছ অথবা ডিম দিয়ে এ সবজি রান্না করা যায় এবং সকলের কাছে প্রিয় একটি তরকারি বলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সর্বোপরি এ সবজি সম্পূর্ণ বিষমুক্ত। আর ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। এর পাতা ভাজি একটি মুখরোচক ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য।

সজনের ডাটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় না মেহেরপুর জেলায়। গ্রামের বাড়িতে কিংবা ক্ষেতের আইলে লাগানো দু-একটি গাছে যে সজনে ডাটা হয় তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তাইতো সজনের ডাটার দাম খুব বেশি। বছরের প্রথমে বাজারে সজনের ডাটা এলে তা ক্রেতাদের কিনতে হয় ৪শ টাকা কেজি দরে। দিন যাওয়ার সাথে সাথে দাম কমতে থাকে এবং শেষ পর্যায়ে মেহেরপুরের বাজারে কেজি ৪০ টাকার নিচে আর নামে না। যার বাজারমূল্য বাজারের দামি সজবিগুলোর চেয়ে কম নয়। এ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে মেহেরপুর কৃষি বিভাগ এ জেলায় সজনে চাষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সজনের চারা বিতরণ করা শুরু করেছেন।

মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মেহেরপুর সদর উপজেলার আলমপুর, আমদহ ও রায়পুর গ্রামবাসীর মাঝে উন্নত জাতের সজনে উৎপাদনে সজনের ডাল ও হাইব্রিড চারা বিতরণ শুরু করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আলমপুর গ্রামের আইপিএম ক্লাবের সামনে ৪শ জন ও শুক্রবার সকালে আমদহ গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সমান সংখ্যক কৃষকদের মাঝে সজনের ডাল ও হাইব্রিড চারা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মেহেরপুর সদর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে সজনের গাছ বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানালেন মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার একেএম কামরুজ্জামান।

সজনের ডাল ও হাইব্রিড চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার স্বপন কুমার খা। তিনি বলেন- সদর উপজেলার আলমপুর, আমদহ ও রায়পুর গ্রামকে সজনে গ্রাম হিসেবে পরিচিত করা হবে। প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একটি করে সজনে গাছ থাকবে। যে গাছ থেকে সারাবছর ডাটা পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে জেলার প্রতিটি গ্রামে এ চারা বিতরণ করা হবে।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কামরুজ্জামান জানান- ঝড়-ঝাপটার কারণে সজনের চাষ খোলা মাঠে করা সম্ভব হয় না। তাই মেহেরপুর কৃষি বিভাগ প্রতিটি বাড়িতে সজনের চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার সজনের ডাল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। শুধু মরসুমে নয়; সারাবছর যাতে সজনে পাওয়া যায় সেজন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় ভারত থেকে হাইব্রিড সজনের এ জাতটি (বীজ) সংগ্রহ করে সদর উপজেলার বারাদী হর্টিকালচারে চারা উৎপাদন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের মহাপরিচালকের মাধ্যমে ভারত থেকে হাইব্রিড সজনের বীজ সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন- সজনের ডাল ও চারা থেকে গাছ করার প্রয়োজনীয় পরামর্শের পাশাপাশি খাঁচা ও সার বিনামূল্যে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন- হাইব্রিড সজনের চারা এক মিটার লম্বা হলে তার মাথাটি কেটে দিতে হবে। পরের বছর ওপরে আরও এক মিটার লম্বা হওয়ার পরে পুনরায় মাথা কেটে দিতে হবে। গাছ শক্ত হলে তৃতীয় বছর থেকে সজনের ডাটা সংগ্রহ করা যাবে। হাইব্রিড এ সজনে গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ সজনে পাওয়া যাবে এবং প্রায় সারাবছর পাওয়া যাবে। প্রতিটি সজনে ডাটা প্রায় দেড় হাত বা তার বেশি লম্বা হবে। এসব সজনে গাছে বিষ দেয়া লাগবে না। প্রয়োজনে মাঝে মাঝে পরিচর্যা ও সার পানি দিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ সজনে পাওয়া যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান- মেহেরপুর মাটি ও আবহাওয়া সজনে চাষের উপযোগী। শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এর আবাদ মাঠে করা সম্ভব নয়। তাই জেলার বাড়ি বাড়ি সজনে গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জেলার প্রত্যেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঘরে ঘরে সজনের গাছ করা সম্ভব হলে সারা বছর ভেষজগুণ সমৃদ্ধ সজনের ডাটা ও সজনে শাক পাওয়া যাবে। এছাড়া জেলার বাইরে সজনের ডাটা রফতানি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন এ জেলার মানুষ।