রবীর কর্মকে উপলব্ধি করে জীবনের পথচলায় জড়িয়ে নেয়ার আহ্বান

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শুধু আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব শ্রদ্ধাজ্ঞাপন নয়, তার দিক-নির্দেশনায় মানবমুক্তির পথের এ দিশারীকে সম্মিলিতভাবে অনুসরণ করাই হবে তাকে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো। তার কর্মকে উপলব্ধি করে জড়িয়ে নিতে হবে জীবনের পথচলায়। গতকাল রোববার নানা অনুষ্ঠানে গানে, কথায়, কবিতায় কবিগুরুকে স্মরণ করার পাশাপাশি এ কথাই উচ্চারিত হলো সবার মনে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী জীবন দর্শন, মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমাজে প্রতিষ্ঠা এবং রবীন্দ্র চর্চাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করা হয় এসব অনুষ্ঠানে।

চুয়াডাঙ্গায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৭টায় শ্রীমন্ত টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়। একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাসঙ্গিকতা এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। জেলা প্রশাসক বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী বলে শেষ করা যাবে না। কারণ তার পরিধি অনেক বিস্তীর্ণ। তারপরও যেটা না বললেও নাই সেটা হচ্ছে, তার উপন্যাস,গল্প, ছোট গল্প যেটাই হোক না কেন তার প্রতিটি লাইনে আছে আলাদা তাৎপর্যপূর্ণ। এককথাই তার প্রতিটি লাইনেই আছে পেছনে লুকায়িত কথা। আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত তার রচনা ও সুর করা। এক কথাই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে তাকে এক নামে চেনে। তাকে সবাই কবিগুরু বলে জানে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনজুমান আরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হামীম হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন, আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুন উজ্জামান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফুল আলম, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মুনিবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, সৈয়দা নাফিস সুলতানা, সাব্বির রহমান সানি, জেসমিন নাহার, টুকটুক তালুকদার, প্রাক্তন অধ্যক্ষ এসএম ইস্রাফিল প্রমুখ। আলোচনাসভা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমি আলোচনা ও মনোজ্ঞ সাংকৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শওকত আলী বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন মহিলা সদস্য আলীজা বেগমসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। সঙ্গীত পরিবেশন করে বিদ্যালয়ের ছাত্রী জাকীয়া আসলাম, সুমাইয়া আক্তার, সালমা খাতুন ও সেতু খাতুন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক দিলরুবা খানম।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ২৫ বোশেখ বিশ্বকবি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী জীবননগর সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল রোববার সাহিত্য পরিষদে কবি গুরুর জীবনী নিয়ে আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি ও রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আ. লতিফ অমল। সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ডা. শহিনুর হায়দারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলমের পরিচলানায় কবি গুরুর ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী নিয়ে আলোচনা করেন অ্যাড. মুন্সি তারিকুজ্জামান, কাজী বদরুদ্দোজা, শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও ইছাহক আলী। কবিতা আবৃত্তি করেন খলিলুর রহমান, আজিজ হোসেন, রেজাউল করিম, শেখ নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন যথাক্রমে হাবিবুর রহমান, মুজিবুর রহমান, আনিছা জেবুননেছা, শাহানাজ পারভীন, এমএ আলী ও মোজাম্মেল হক।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২৫ বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে কবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রোববার সকাল ১০টায় কুঠিবাড়ির মূলমঞ্চে কবির রচিত আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও উদ্বোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়েছে। পরে সেখানে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ। জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের জীবন-কর্ম ও বিশ্বকবির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক লেখক গবেষক ড. মাসুদ রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেলা আক্তার। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান উপভোগ করতে এলাকার রবীন্দ্রপ্রেমীরা কুঠিবাড়িতে জড়ো হয়েছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা পুলিশ।

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কবির জীবনের বেশকিছু মূল্যবান সময় কেটেছে। নিরিবিলি পরিবেশ, জমিদারি আর ব্যবসার কারণে বারবার এই কুঠিবাড়িতে ফিরে আসতেন রবি ঠাকুর। এখানে বসেই তিনি অসংখ্য কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন।