দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় কবি নজরুলের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভায় হাজি আলী আজগার টগর এমপি

 

জাতীয় কবি নজরুল লেখনির মাধ্যমে বাঙালি চেতনায় চির জাগ্রত হয়ে আছেন

স্টাফ রিপোর্টার: ‘কবি নজরুল বিদ্রোহ-প্রেম, সাম্য, তারুণ্যের ও মানবতার কবি। লেখার মাধ্যমে সমাজ থেকে অন্যায়, দুর্নীতি ও অসত্য দূর করার জন্য তিনি বিদ্রোহ করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি তার কবিতার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। কবি আমাদের বাঙালি চেতনায় চির জাগ্রত হয়ে রয়েছেন।’ গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় খেলার মাঠে আয়োজিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনাসভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর।

তিনি আরও বলেন, অসাম্প্রদায়িকতার মুক্ত কন্ঠস্বর, বিদ্রোহ আর প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একবিংশ শতাব্দির সাম্প্রদায়িকতা আর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হাতিয়ার। আমাদের সবার উচিত কবি নজরুলকে বেশি বেশি করে চেনা ও  জানা। তাঁর চিন্তা ও দর্শন থেকে আজকের তরুণদের শিক্ষা নিতে হবে। কেননা তরুণরাই পারে অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে নজরুলের মতো নির্ভীক রুখে দাঁড়াতে। এটি অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে কবি কিছু দিন আমাদের চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় স্ব-পরিবারে অবস্থান করেছিলেন। তিনি এখান থেকেই তার ‘লিচু চোর’ কবিতাটি রচনা করেন। সরকার থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে কার্পাসডাঙ্গায় এসেছিলেন তার স্বীকৃতি আমরা পেয়ে গেছি।  কবি’র স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।

দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় খেলার মাঠে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা ও দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা শিল্পকলা একাডেমি। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হামিম হাসান, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংঘের সভাপতি এমএ গফুর, সাহিত্য সংসদের সভাপতি রবিউল হোসেন শুকলাল ও কবির স্মৃতিবিজড়িত আট চালা ঘরের মালিক মি. প্রকৃতি বিশ্বাস বকুল। আলোচনাসভার এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা রোধে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা’।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফের কবি নজরুলের ছন্দ ও কবিতাময়ী সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল ইসলাম মালিক, দামুড়হুদা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল হালিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সালমা জাহান পারুল, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মুনিবুর রহমান, সহকারী কমিশনার তরিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, সৈয়দা নাফিজ সুলতানা, স্থানীয় নজরুল স্মৃতি সংঘ ও সাহিত্য সংঘের সদস্যসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত আট চালা ঘরের মালিক মি. প্রকৃতি বিশ্বাস বকুল। বক্তব্যে কবি নজরুলের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। পরে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জাতীয় কবির গান, কবিতা ও নাটক পরিবেশন করেন জেলা শিল্পকলার শিল্পীবৃন্দ।

এদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মদিন যথাযথ মর্যাদার সাথে পালনের উদ্দেশে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চুয়াডাঙ্গা জেলা সংসদ যৌথভাবে গান কবিতা গল্পর আসর আয়োজন করে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন হলে অনুষ্ঠিত আসরে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আব্দুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার অ্যাড. বজলুর রহমান, আবৃত্তি পর্ষদের পরিচালক মরিয়ম শেলী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কম. লুৎফর রহমান, অ্যাড. নওশের আলী। আসরে আরো যারা গান-আবৃত্তি-আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক শাওন রায়, যুগ্ম আহ্বায়ক তাসলিমা আলম, বিপুল সরকার, অমিত, রায়হান আহমেদ প্রিন্স, মেহেরাব্বিন সানভি, রাব্বি এবং উদীচী‘র সঙ্গীত সম্পাদক আদিল হোসেন, মিলন অধিকারী, শ্রীদাম রায়, আহসান কবির ও হিরো। আসরটি সঞ্চালনা করেন হাবিবি জহির রায়হান ও শাওন রায়। প্রধান অতিথি  তার আলোচনায় বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম আধুনিক নানান প্রযুক্তি ব্যবহারে আসক্ত হয়ে পড়ছে কিন্তু উচিত ছিলো দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রযুক্তির সাথে সাথে নিজের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হওয়া, প্রগতির পথে হাটা। নজরুল সাহিত্য-কর্ম ভালভাবে জানা।’

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি নূরুল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খায়রুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেহেরপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন ধূমকেতু। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক ড. গাজী রহমান, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি মোমিনুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ, সদস্য নিশান সাবের, সাংস্কৃতিক কর্মী শাশ্বত নিপ্পন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে স্থানীয় শিল্পীরা নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় কবির কবিতা আবৃত্তি করেন। সবশেষে সেখানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ‘মানুষ’ অবলম্বনে নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। ‘মানুষ’ কবিতার নাট্যরূপ দেন সহকারী অধ্যাপক হাসানুজ্জামান মালেক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আবুল হাসনাত দিপু ও নির্জনা।