যুবক-যুবতীর কথা বলা দেখে যখন ভয়ানক হয়ে ওঠে ওরা

 

প্রসঙ্গটি পূর্বেও পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয়েছে, উঠে এসেছে মাথাভাঙ্গা’র সম্পাদকীয় কলামেও। বিষয়টি বোধ হয় কর্তাদের তেমন চোখে পড়েনি। সে সময় চোখে পড়লে নিশ্চয় কর্তাদের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ সংলগ্ন এলাকায় গজে ওঠা উঠতি বয়সীদের গড়ে তোলা গ্যাঙের সদস্যরা অতোটা ভয়ঙ্কর হতো না। কতোটা ভয়ঙ্কর হয়ে না ওঠলে, যুবকের সাথে যুবতীর কথা বলতে দেখে আপত্তিকর অভিযোগ তুলে ঘরে আটকে শুধু নগদ টাকাই নয়, সোনার গয়নাও হাতিয়ে নিয়েছে। এরপর? ধর্ষণ করেছে। তারপর? ধর্ষণের পরও থামেনি। আবারও ধর্ষণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, সাড়া না গিলে গোপন কাহিনী ফাঁস করে দেয়া হবে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন গ্রাম্য সরলসোজা একজন অপ্রাপ্ত স্কুলছাত্রীর সামনে শুধুই অন্ধকার ছাড়া আর কি থাকে? উপায় না পেয়ে বিষপানে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছে। গতকাল পত্রিকায় প্রসঙ্গটি অবশ্যই বিবেকবানদের কিছুটা হলেও নাড়িয়েছে। এরপরও কি কর্তাদের বসে থাকা উচিৎ?

শুধু চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকা নয়, নূরনগর বিএডিসি খামারসহ বেশ কিছু এলাকা রয়েছে, যেখানে যুবক যুবতী দূরের কথা স্বামী-স্ত্রীরাও নিরাপদ নয়। একটু নিরিবিলি কথা বলছে দেখলেই আপত্তিকর অভিযোগ তুলে শুরু হয় অর্থকড়ি কেড়ে নেয়ার মহাউৎসব। ধর্ষণও করে উঠতি বয়সীদের গড়ে তোলা একাধিক ছিচকে গ্যাং। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকার গ্যাং এক যুবতীকে ধর্ষণ করেছে বলে গুঞ্জন ওঠে। তাও আবার হাসপাতালেরই একটি কক্ষে। বিষয়টি অনেকেই জানেন, অথচ তাদের কেউই মুখ খুলতে সাহস পায়নি। অবেশেষে ধর্ষণের শিকার যুবতী যখন বিষপান করে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালায় তখন তার প্রেমিকই সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেন। একজন গ্রামের ছেলে হয়েও তার এই মুখ খুলে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অনুরোধ জানানোকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। প্রথমেই যুবকের প্রতিবাদ জানাতে হতো। তখন জানাতে পারেনি। হয়তো প্রাণভয়ে। নয়তো অন্যকিছু। পরে যখন মুখ খুলেছে অবশ্যই তার সাহসকে সাধুবাদ জানিয়ে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।

হাসপাতালে যুবতী ধর্ষণ ঠেকাতে না পারার ব্যর্থতা আড়ালের চেষ্টা হবে আত্মঘাতী। তদন্ত কর্তা নিশ্চয় সে পথে না হেঁটে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। প্রকৃত দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে সমাজেরই স্বার্থে। সেটা নিশ্চিত করতে শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীল কর্তাদের ওপর নির্ভর করলেই হবে না, সমাজকেও জেগে ওঠতে হবে। যে সমাজে যুবক-যুবতী, নারী-পুরুষের পথে ঘাটে, জনগণ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই, সেই সমাজকে কি সভ্য সমাজ বলা যায়? ছি! ধিক তোমাদের, যারা অন্যায় করেছো আর অন্যায় দেখেও যারা মুখ বুঝে থেকেছো।