আসেম সম্মেলন এবং…

যার যার অবস্থান থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা ধর্মের নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়াতে উসকানি দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। গত রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। উল্লেখ্য, মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোরে সম্প্রতি এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলন (আসেম) শীর্ষ সম্মেলনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। জঙ্গিবাদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে দেশের প্রতিটি এলাকায় কার্যক্রম চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আসেম হচ্ছে ৫১টি এশিয়া ও ইউরোপের দেশ ও দুটি আঞ্চলিক সংস্থার ফোরাম। আসেম সম্মেলনের গৃহীত উলানবাটোর ঘোষণায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন, সমুদ্র নিরাপত্তা, সাগরে জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতি বন্ধের পাশাপাশি মানব ও মাদক পাচার, সাইবার নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধের মতো অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্মেলনে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বিশ্বনেতাদের জানান। তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান যেন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে মদদদাতা, অর্থদাতা ও প্রশিক্ষণদাতাদের খুঁজে বের করা হয়, যা বিশ্ব শান্তির জন্য খুবই জরুরি।

সম্মেলনের সাইডলাইনে বেশ কয়েকটি দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এসব বৈঠকে বিশ্ব নেতৃত্বকে আশ্বস্ত করা হয় সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ প্রয়োজন হলে বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা নিবে। দু দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নেন ১১টি দেশের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ ২৩টি দেশের প্রধানমন্ত্রী, ১৬ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট এবং অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের সেক্রেটারি জেনারেল।

উল্লেখ্য, অধিকতর ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্ব গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এশিয়া ও ইউরোপের সম্পর্ক গভীরতর করার উদ্দেশ্যে আসেম গঠিত হয়। বাংলাদেশ ২০১২ সালে আসেমে যোগদান করে। বিশ্বের নতুন অর্থনৈতিক মেরুকরণে আসেমের দেশগুলো নতুন প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র ও সংযোগস্থলে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন-পুরনোর মেলবন্ধন ঘটছে। দীর্ঘদিনের পরিচিত বাণিজ্য ও শিল্প অংশীদাররা এখন নতুনদের জন্য পথ তৈরি করে দিচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বিরাট সুযোগ বৈকি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও উৎপাদন, সেবা খাতে ধারাবাহিক ও দায়িত্বশীল বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠছে। শুধু তাই নয়, আঞ্চলিক কর্মকাণ্ড ও বৈশ্বিক পণ্য বিপণন ব্যবস্থাপনাও সম্প্রসারিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকসহ ব্যক্তি উদ্যোক্তারা আরও মনোযোগী হলে বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হওয়া মোটেও কঠিন নয়।

এবারের সম্মেলনে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের পরেই যোগাযোগের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এজন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে অত্যধিক জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে গৌরবের। ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণু পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে সার্বিক স্থিতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় যোগাযোগের কৌশলগত সুযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে আসেম সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ বিশেষভাবে উপকৃত হবে বলে সবার বিশ্বাস।