বাংলাদেশ-ভারত আসামি বিনিময় চুক্তি সহজীকরণ

 

বিশ্বের সব দেশেই অপরাধীদের বাস রয়েছে। এদের অনেকেই অপরাধ করে আইনের চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী কিংবা প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে আসামি হস্তান্তরে সহজ কোনো চুক্তি না থাকলে আসামি ফেরত পেতে নানা রকম জটিলতার সম্মুখিন হতে হয়। কারণ ইচ্ছে করলেই কোনো দেশ অন্য দেশ থেকে কাউকে জবরদস্তি করে ধরে আনতে পারে না। এছাড়া প্রত্যেকটি দেশেই আইনি কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ অপরাধী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত থেকেও যে এদেশে কেউ এসে আশ্রয় নেয় না তা নয়। অতীতে এইসব অপরাধীদের হস্তান্তরে নানা জটিলতা অতিক্রম করার তিক্ত দৃশ্য আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। অবশেষে আসামি হস্তান্তরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সব ধরনের জটিলতার অবসানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বহিঃসমর্পণ চুক্তির একটি ধারা সংশোধন করে কারো বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে প্রমাণ উপস্থাপন না করেও বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যে যাতে আসামি বিনিময় করতে পারে সেই সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৮ জুলাই ২০১৬ তারিখ সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভারতের সাথে করা এই বহিঃসমর্পণ চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন পায়।

বাংলাদেশ-ভারত শুধু পার্শ্ববর্তী বা প্রতিবেশী দেশই নয়। দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় এর সাথে জড়িত। এছাড়া দুটি দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে আন্তরিক একটি বন্ধনও বহমান রয়েছে। নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি দেশ একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। জঙ্গিবাদ দমন, পারস্পরিক বাণিজ্য, যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক লেনদেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশ্নে দুই দেশের সরকারের মধ্যকার আন্তরিকতাও অনুসরণযোগ্য। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আসামি বিনিময়ে যেকোনো ধরনের সহজপন্থা অবলম্বনই শ্রেয়। এতে করে কোনো অপরাধ সংগঠনের আগে অপরাধীরা আশ্রয়জনিত অনিশ্চয়তায় ভুগবে এবং অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধ কর্মকাণ্ড থকে সরে আসার ভাবনাও করবে হয়তো। তাছাড়া বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাতে কোনো অপরাধী যেন আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিরাপদ কোনো আশ্রয় খুঁজে না পায় সে বিষয়েও যৌথ উদ্যোগ থাকা জরুরি। ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ভারতের সাথে বাংলাদেশ ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময়ে বহিঃসমর্পণ চুক্তি করে। ওই বছরের ৭ অক্টোবর এই চুক্তিতে অনুসমর্থন দেয় মন্ত্রিসভা। ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে চুক্তিটি কার্যকর রয়েছে। ১৮ জুলাই চুক্তির একটি ধারায় সংশোধনী অনুমোদনের পর দুটি দেশের জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, ট্রাইব্যুনাল বা এ ধরনের অথরিটি অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু করে থাকে আর সে যে দেশেরই হোক দু দেশই বহিঃসমর্পণের সুপারিশ করতে পারবে। এর আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা কাউকে বিচারের সম্মুখিন করতে বহিঃসমর্পণের জন্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হতো।

অপরাধমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে হলে দেশে দেশে অপরাধী হস্তান্তর বিষয়ক আইন সহজ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। আইনের ফাঁক গলে কোনো আসামি যদি তার কৃত অপরাধ থেকে মুক্তি বা সুরক্ষা পেয়ে যায় তবে তা তাকে আরো বেপরোয়া হওয়ার দুঃসাহস জোগাবে। শান্তির পক্ষে বর্তমান বিশ্বের সাথে তা বড়ই বেমানান। বাংলাদেশ-ভারত আসামি বিনিময় চুক্তি সহজীকরণ উদ্যোগ অন্যান্য দেশের জন্যও উদাহরণযোগ্য এবং অপরাধীদের জন্য পুরো বিশ্ব বিপজ্জনক হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশাও আমাদের।