নিখোঁজ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বত্র

 

গুলশান এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর রহস্যজনক নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। প্রাথমিকভাবে শতাধিক তরুণের নিখোঁজ হওয়ার তথ্যের পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে এ সংখ্যা ২৬১। বাড়ি থেকে পালিয়ে জঙ্গিবাদে জড়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত ভীতিপ্রদ, ফলে নিখোঁজদের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তরুণরা প্রথমে নিখোঁজ হয়ে পরে জঙ্গি হয়ে আত্মপ্রকাশ করলে একটি দেশের জন্য তা কতোটা ভয়াবহ হতে পারে, সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার মধ্যদিয়েই তা প্রতিফলিত। সঙ্গত কারণে নিখোঁজ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বত্র। স্বেচ্ছায় ঘর ছাড়ার কারণে নিখোঁজদের খুঁজে বের করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে সন্দেহাতীতভাবে উগ্রপন্থার সাথে জড়িত থাকার তথ্যও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে নেই। তবে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, নিখোঁজদের অনেকেই দেশ ছেড়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া চলে গেছে। তাদের পাঠানো নেটওয়ার্কের বাইরে কিংবা পরকালে দেখা হবে বার্তা এসবই প্রমাণ করে। হজের কথা বলে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি পরিবারের ৬ সদস্য নিখোঁজ রয়েছে বলে সম্প্রতি খবর এসেছে। আক্ষরিক অর্থে এরা শুধু পরিবার থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে না, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে দেশ, সমাজ, এমনকি যে নেটওয়ার্কের অংশ হতে তারা পারিবারিক নেটওয়ার্ক ছিন্ন করছে, সত্যিকার অর্থে সেই ধর্মের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এই পথবিচ্যুতদের কীভাবে ফিরে পাওয়া যাবে সেটাও এখন বড় প্রশ্ন। উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি তাই উদ্বেগের অন্যতম কারণ।

নিখোঁজ তালিকার সন্দেহভাজনদের বেশির ভাগ ২০১৫ সালে নিরুদ্দেশ হয়। কেউ চলতি বছরও নিরুদ্দেশ হয়েছে। আরো ভয়ানক তথ্য হচ্ছে, এদের দলে তরুণীরাও রয়েছে। তরুণীরাও যে জঙ্গি দলে ভিড়ছে তার সাক্ষাৎ প্রমাণ মিলেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা থেকে সম্প্রতি জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের ৩ নারী সদস্য আটকের ঘটনায়। এদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি চাপাতি, একটি ছোরা ও মানুষ জবাই করার ভিডিওচিত্র এবং বোমা তৈরির কলাকৌশল লেখা একটি খাতা। কিশোর-তরুণ-তরুণীদের সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, সন্ত্রাসের শেকড় সমাজের গভীরে বিস্তৃত। সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন হামলার ঘটনায় জঙ্গিদের নাম-পরিচয় প্রকাশের মধ্যদিয়ে আমরা এক উদ্বেগজনক সত্যের মুখোমুখি হয়েছি, যা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। সংকট নিরসনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার সম্মিলিত উদ্যোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া হামলার পেছনে অর্থদাতা, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের খুঁজে বের করারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আইন প্রয়োগকারী সব বাহিনীর সমন্বয়ে একটি বিশেষ তদন্ত টিমও গঠিত হয়েছে বলে জানা যায়।

দেশ এক গভীর সংকটের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। ধর্মকে বর্ম করে যারা প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা করে চলেছে, এরা দেশ-জাতির ও মানবতার চরম শত্রু। এদের প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি নাগরিকের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি, এমন কথাও উঠে এসেছে বিশ্লেষক মহল থেকে। তবে নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে গোয়েন্দা বাহিনীগুলোকেই নিতে হবে সর্বোচ্চ যথাযথ পদক্ষেপ। দেশে ইসলাম নামধারী যেসব উগ্রবাদী সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে তা নির্মূলে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। তরুণদের ভুল পথে পরিচালিত করে যে অশান্তি সমাজে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তা ইসলামের দৃষ্টিতেও নিন্দনীয়। এ উপলব্ধিও সঞ্চারিত করতে হবে সবার মধ্যে।

সর্বোপরি বলতে চাই, জঙ্গি নির্মূলে প্রয়োজনে সরকারকে নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে। নিখোঁজদের ব্যাপারে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করে সে মোতাবেক কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের দলে ভিড়িয়ে জিহাদের নামে আত্মঘাতী হিসেবে গড়ে তুলছে, তাদের দমনও অপরিহার্য। আমরা মনে করি, সম্মিলিত বাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রে বিদ্যমান নানা অসঙ্গতির অবসান এবং ধর্মের প্রকৃত মর্মবাণী তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগও নেয়া যেতে পারে। পরিকল্পিত কার্যকর উদ্যোগই পারে জঙ্গি-সন্ত্রাসের এই বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন করতে।