আটঘাট বেঁধে রাজনীতি ফিরছে রাজপথে

স্টাফ রিপোর্টার: সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও ও গুপ্ত হামলা রুখতে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের ঘোষণা ছিলো মাস কয়েক আগেই। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। সফল হয়নি ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যও। তবে প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশনা থাকায় এবারই প্রথম আটঘাট বেঁধে নামেছে আওয়ামী লীগ ও সমমনারা।

দলীয় সূত্র বলছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে ১৪ দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে সমন্বয় করে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটি গঠন শেষ হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে বাকিগুলো গঠনেরও। চলতি মাসেই এই প্রক্রিয়া শেষ হলে সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই শুরু করবে জানিয়েছে সরকার সমর্থক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে জঙ্গি হামলার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। দেশের ইমেজ নষ্ট হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আর এ কারণেই সর্বত্র সতর্ক দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের উদ্যোগে গঠিত জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি সেটাই করবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশেই শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেখানে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা স্থান পাবেন। নগর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এই কমিটি গঠন হলে জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনা অনেকটাই সহজ হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিবাদ দমনের আন্দোলনে মোট ৩ বিষয়কে সামনে রেখে কাজ করবে ১৪ দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে জঙ্গিবিরোধী সমাবেশ, সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আইনের হাতে সোপর্দ করা এবং সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সচেতন করা। বাড়তি নজরদারি রখা হবে তুলনামূলক ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোয়। আর পুরো এ বিষয়টা সম্পন্ন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় পেশাজীবী, ধর্মীয় নেতা বা আলেম-ওলামা-পুরোহিত এবং সমাজপতিদের সহায়তা নেয়া হবে। সমন্বয় সাধন করা হবে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর পরই সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে প্রথমবারের মতো বিশেষ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিভাগ ও জেলার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটিগুলোকে জনসচেতনতায় কাজ করার আহ্বান জানান। কিন্তু তাতেও গড়িমসি দেখা যাওয়ায় মঙ্গোলিয়া সফরের সংবাদ সম্মেলন শেষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত এক বৈঠকে দল ও সমমনা সংগঠনগুলোর প্রতি দ্বিতীয়বারের মতো নির্দেশনা জারি করেন তিনি। যা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে জেলায় জেলায় পাঠানো হয়। বলা হয়, জোটনেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক দেশব্যাপী ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা এবং মহানগরে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে। মূলত ওই বৈঠকের পরই নড়েচড়ে বসেন নগর ও জেলা সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। শুরু করেন জঙ্গিবিরোধী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী ১৪ দল। যাতে আহ্বায়ক মনোনীত হয়েছেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। উপদেষ্টা রাখা হয়েছে সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, মহানগর জঙ্গি দমনের ওই কমিটিতে ইতোমধ্যেই ১২০টি সংগঠনের নেতারা স্থান পেয়েছেন। দুই একদিনের মধ্যেই এখানকার নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের মহল্লায় এবং উপজেলা পর্যায়ের গ্রামে গ্রামে এই কমিটি গঠন করা হবে।

শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি করবে ছাত্রলীগ: এদিকে ১৪ দলের বাইরে পড়া-মহল্লা ও স্কুল-কলেজে জঙ্গিবিরোধী প্রতিরোধ কমিটি গঠন করবে ছাত্রলীগ। বুধবার রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাথে মতবিনিময়কালে এই ঘোষণা দেন তিনি। সোহাগ বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগই বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলো। আজকে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ছাত্রলীগই অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এজন্য পাড়া-মহল্লায়, স্কুল-কলেজে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। জাতির পিতার সোনার বাংলায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদের আস্তানা হতে দেবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন সোহাগ।