জেলা প্রশাসক সম্মেলনে গুরুত্বপাবে জঙ্গি প্রসঙ্গ : থাকছে ৩৩৪ প্রস্তাব

 

স্টাফ রিপোর্টার: গতানুগতিক আলোচনার বাইরে এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রাধান্য পেতে পারে জঙ্গি প্রসঙ্গ। সম্মেলনে জঙ্গি বিষয়ক আলোচনাই উত্তাপ ছড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি আর স্থানীয়ভিত্তিক কিছু প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এই সম্মেলন। অবশ্য ডিসিরা তাদের কাজকর্ম করতে গিয়ে কিছু রাজনৈতিক সুবিধা-অসুবিধার কথাও তুলে ধরেন।

আগামী ২৬ জুলাই থেকে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে উপস্থিত থাকবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, সকল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সচিব, সকল বিভাগীয় কমিশনার আর জেলা প্রশাসকেরা। সম্মেলনের প্রস্তুতি এবং বিষয়বস্তু নিয়ে আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ সন্মেলন করবেন বলে জানা গেছে। এ সম্মেলনে যোগদিতে আজ রোববারই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টসূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, সন্মেলনে এবারও প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ধরে ধরে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে। ডিসিদের পরামর্শ শোনা হবে। যেগুলো গ্রহণ করার মতো, তা গ্রহণ করা হবে। এবার দেশের ৬৪ জেলার পক্ষ থেকে ডিসি সন্মেলনে ৩৩৪টি প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে যেটি ডিসিরা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছেন সেটি আবারো রাখা হয়েছে। প্রস্তাবটি হচ্ছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সর্বোচ্চ শাস্তি যেন ২ বছরের পরিবর্তে চার বছর দিতে পারেন। এ জন্য মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধনের প্রস্তাব করছেন তারা। জেলার অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সহকারী জেলা প্রশাসক (এডিসি) নিয়োগকালে প্রযোজ্য আদেশে যেন তাদেরকে বিচারিক ক্ষমতা (যা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য প্রযোজ্য) প্রদান করা হয়, সে প্রস্তাবও রয়েছে।

এছাড়া দেশের অধিকাংশ সার্কিট হাউস সংস্কার, মন্ত্রীদের জেলা-উপজেলা সফরকালে অতিরিক্ত গাড়ির প্রয়োজন হয়, সেজন্য জেলা পুলে একটি করে অতিরিক্ত গাড়ি প্রদানের প্রস্তাব রয়েছে। রয়েছে জেলার আপ্যায়ন বাজেট বাড়ানোর কথাও। কারণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা বাড়লেও জেলার আপ্যায়ন ব্যয় না বাড়ানোয় সঙ্কটে থাকেন ডিসিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এসব প্রস্তাবভিত্তিক আলোচনা ছাপিয়ে এবার জঙ্গি আর সন্ত্রাস ইস্যুই মুখ্য হয়ে উঠবে। কথা হবে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি গঠন এবং এর কাজকর্ম নিয়েও।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সারাদেশে সন্ত্রাসী তাণ্ডব রুখতে জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। উপজেলা পর্যায়েও ইউএনওদের নেতৃত্বে অনুরূপ কমিটি হয়েছিলো। সাম্প্রতিক গুলশান হামলার পর সরকার থেকে ওই কমিটি আরো বিস্তৃত করে কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটি এক প্রকার প্রশাসনিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বিষয়টি রাজনৈতিক। ধারণা করা হচ্ছে- ডিসিরা সে কথাই তুলবেন সম্মেলনে। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে সন্ত্রাস রুখতে খুব কম জায়গায়ই রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসন বিশেষ করে পুলিশকেই সামলাতে হয়েছে সামগ্রিক পরিস্থিতি। সাথে ছিলো সিভিল প্রশাসন। ডিসি আর বিভাগীয় কমিশনাররা সন্ত্রাস দমনের এসব বাস্তব অভিজ্ঞতা এবার সম্মেলনে শেয়ার করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।