মানুষ সর্বগ্রাসী বলেই বিগড়েছে প্রকৃতি

 

সর্বগ্রাসী হওয়ার খেসারত অনিবার্য। বিশেষ করে যে সমাজের মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশ গিলে খায়, সেই সমাজের মানুষকে অবশ্য অবশ্যই চরম মূল্য দিতে হয়। নানাভাবেই প্রমাণিত। যেমন সামান্য বর্ষণেই আমাদের আবাদী জমি, আবাদ জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিকভাবে পায়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা তথা নদ-নদী, খাল-বিল, বাওড়-নালা আমরা রক্ষা করতে না পেরে গিলে খাওয়ার মতোই দখল করে নিয়েছি বলেই বর্ষায় ফুটে উঠছে করুণ দশা। অবশ্য ওসব তো আর সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক জবরদখল করে না, ভূমিদস্যু মতলববাজ জোরদাররাই রাতারাতি নিজেদের বানিয়ে নেয়। তাতে কোনো না কোনোভাবে প্রশাসনের সহযোগিতা থাকে। তা না হলে প্রাকৃতিকভাবে জলধারার পথ বন্ধ করে পুকুর বানানো হয় কীভাবে? চুয়াডাঙ্গা জেলাতেও এর দৃশ্যমান উদাহরণ অসংখ্য।

নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, নালার দেশ বলেই সোনাফলা শষ্য শ্যামলা। এমন সবুজেভরা মায়াবি সুন্দর দেশ বিশ্বে আর কোথাও নেই। অথচ আমরা আমাদের সবুজেভরা শস্য শ্যামলা দেশটাকে নিজেরাই করে তুলছি মরুভূমি। সামান্য খরাতেই পুড়ছি, অল্প বৃষ্টিতেই ডুবছি। ভূগর্ভ থেকে দেদারছে পানি তুলে সেচে লাগানোর কারণে যেমন পানি স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে, তেমনই আগান-বাগান কেটে গড়ে তুলছি ইট, সিমেন্ট বালি রডের বন। এতে বিগড়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। যথাসময়ে চাহিদা মতো বৃষ্টি না হওয়া তারই কুফল। তাছাড়া ভূগর্ভের পানি তুলে নেয়ার কারণে খাল-বিলের পানি নেমে যাচ্ছে নিচে, খাল-বিল পুকুর নালা হয়ে পড়ছে পানিশূন্য। এরপর যখন খাল-বিল নদ-নদী বাওড় নালা বেদখল করে আটকে দিচ্ছি স্বাভাবিক জলধারার পথ তখন সামান্য বৃষ্টিতে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে আমাদের। তা না হলে এক-দু দিনের বৃষ্টিতেই আবাদ, আবাদি জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ছে কেন। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় দুই দিনের বৃষ্টিতে বহু ফসল পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণের বরাত দিয়ে এ বিষয়ে পরশু পত্রিকায় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। যদিও প্রতিবেদনে চুয়াডাঙ্গার কুমার নদ, চিত্রা, নবগঙ্গা কীভাবে এখন কাদের দখলে তার বর্ণনা নেই। চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের দক্ষিণে জোলটারও হালচিত্র নেই প্রতিবেদনে। শহরের জন্য জোলটার জলধারা ধরে রাখতে না পারার খেসারত শহরবাসীকেই দিতে হচ্ছে, দিতে হবে।

অবশ্যই মানুষ বাড়ছে, মানুষ মানুষের স্বার্থেই গড়ে তুলছে ঘরবাড়ি। উজাড় হচ্ছে আগান-বাগান। নদ-নদীর তীরই শুধু নয় পুরো নদী দখলে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয় কেউ। ফলে বর্তমানকেই পড়তে হচ্ছে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে। ভবিষ্যত তথা প্রজন্মর জন্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে প্রিয় ধরিত্রী। প্রকৃতি রক্ষা করতে না পারলে প্রজন্ম আমাদের শুধু দোষারোপই করবে না, মানবজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন দ্রুত অনিবার্য হয়ে পড়বে। তা হলে কী করতে হবে? এই ধরাধামের প্রতি দায়িত্ববানদেরই অধিক যত্নবান হওয়া দরকার। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে জন্মহার দ্রুত অর্ধেকে নামাতে হবে। আবাদী জমি গ্রাসের আগে অল্পতে অধিক আবাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রশাসনের স্বচ্ছ জবাবদিহিতায় বন্ধ করতে হবে দুর্নীতি।