সক্রিয় জালনোট তৈরির সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট

সম্পাদকীয়

 

ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের আর বেশিদিন বাকি নেই। এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সে সাথে বরাবরের মতো সক্রিয় হয়ে উঠেছে জালনোট তৈরির সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। দেশের যে কোনো সার্বজনীন উৎসবে এরা তাদের কালো থাবা বিস্তার করে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং পূজার সময়কেই এরা টার্গেট করে। কারণ এই সময়টাতেই তরল অর্থের বেশি লেনেদেন হয়ে থাকে। তবে কোরবানির সময়টাতে সবচেয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হওয়ায় জালনোট কারবারিরা এই সময়ে খুব বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। কোরবানির সময় যতো এগিয়ে আসছে এই সিন্ডিকেট গ্রুপ ততো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে অন্যবারের তুলনায় এবার এই অপরাধী চক্রের সদস্যরা আরো বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। রাজধানীসহ সারাদেশে এক হাজার টাকার একটি জালনোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার বিনিময়ে তাদের নিয়োগকৃত লোককে ৫০ থেকে ১শ টাকা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা কোরবানির হাটগুলোকে টার্গেট করে নিছ্রিদ্র কৌশল অবলম্বনের পরিকল্পনা করেছে। এই উদ্দেশে তারা প্রথমত বিভাগীয় এবং পরে জেলা-উপজেলা থেকে গ্রামপর্যায়ে জালনোট ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।

কোরবানির পশুর হাটে নির্বিঘ্নে জালনোট ছড়িয়ে দিতে যেসব হাটে জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন নেই এমন সব হাটের তালিকাও তৈরি করেছে তারা। বিশেষ উৎসব ছাড়াও অশুভ এই চক্র বাজারে জালনোট ছড়িয়ে দেয়ার মতো অপরাধমূলক কাজটি করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ৯ মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যমানের জালনোট শনাক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। সুতরাং ভয়ঙ্কর এই গোষ্ঠীর অপতৎপরতা কতোটা জোরালো তা সহজেই অনুমান করা যায়। জালনোটের প্রচলন, ছাপানো, বিস্তার ও বহনের অপরাধে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬ হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে। ধরাও পড়েছে অনেকে। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা আবার জামিনে বেরিয়ে একই অপরাধে জড়িত হয় এমন তথ্যও গণমাধ্যমে এসেছে।  কিন্তু সঠিক তথ্য-প্রমাণ আর সাক্ষীর অভাবে এসব মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। জাল টাকা বহনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি সাধারণ মানুষের। কারণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী যার কাছেই হোক না কেনো জালনোট পাওয়া গেলে তাকেই অপরাধী বলে গণ্য করা হবে। অথচ খালি চোখে তাৎক্ষণিক জালনোট শনাক্ত করার সহজ কোনো উপায় নেই। কর্মব্যস্ত জীবনে সবার পক্ষে সম্ভবও নয় প্রতিটি নোট যাচাই-বাছাই করা। জালনোট শুধু একজন ব্যক্তির জন্যই বিপজ্জনক নয় একই সাথে তা দেশীয় অর্থনীতির জন্যও বিপদের কারণ। সুতরাং এর সাথে জড়িতদের শনাক্ত করা এবং কঠোর বিচারের সম্মুখীন করা জরুরি। তারা যাতে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।