একই দিন ২ দফা দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেলেও ৩য় দফায় দিতে হল প্রাণ

 

বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন আলমডাঙ্গার সাবেক মেম্বর শহিদুল ইসলাম

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন আলমডাঙ্গার পারদুর্গাপুর গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার ভূষিমাল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম (৫০)। গতকাল শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বণ্ডবিল গেটে অবস্থিত তার আড়ত থেকে আলমডাঙ্গা শহরের মাদরাসাপাড়ার বাড়িতে যাওয়ার সময় চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কের আলমডাঙ্গা বাসটার্মিনালের সামনে এ প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। এ দিন সকাল থেকে দু দফা দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেলেও ৩য় দফায় প্রাণ হারান তিনি।

                জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের পারদুর্গাপুর গ্রামের মৃত মসলেম ওরফে কলিম উদ্দীনের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৫০)। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন। ভূষিমাল ব্যবসায়ী। আলমডাঙ্গা পৌর শহরের বণ্ডবিল রেলগেট বাজারে তার ভূষিমালের আড়ত রয়েছে। দীর্ঘদিন আগে থেকেই তিনি আলমডাঙ্গা শহরের মাদরাসাপাড়ায় নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। গতকাল শুক্রবার বেশ সকাল সকাল তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। ব্যবসার কাজ শেষে একটি ব্যাগে ব্যবসার ৩টি টালিবই নিয়ে ও কিছু পান কিনে মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কের আলমডাঙ্গা বাসটার্মিনালের সামনে পৌঁছুলে পড়েন দুর্ঘটনার কবলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে পেছন দিক থেকে ছুটে আসা কুষ্টিয়াগামী একটি ট্রাককে তিনি সফলভাবে সাইড দিতে পারলেও অব্যবহিত পরের কুষ্টিয়াগামী আল আমিন (মেহেরপুর-জ-১১-০০০৮) নামের ঘাতক বাসের ধাক্কায় তিনি মোটরসাইকেলসহ রাস্তার ওপর ছিটকে পড়েন। মোটরসাইকেলটি রাস্তার একেবারে পাশে পড়লেও তিনি পড়েন রাস্তার ওপর। এ সময় ঘাতক বাসের সামনের ডান দিকের চাকা শহিদুল ইসলামের মাথা পিষ্ট করে দিয়ে চলে যায়। মাথা ফেটে ছিটকে ঘিলু ও রক্ত রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু ঘটে তার। এ মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও বাসের চালক দ্রুত বাস চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। যাত্রীসহ বাসটি আলমডাঙ্গা স্টেশনের সামনে থামিয়ে নিজে পালিয়ে যায়। পরে বিপদগ্রস্ত যাত্রীরাও বাস থেকে নেমে গেলে যাত্রীশূন্য বাস রাস্তায় পড়ে থাকে।

সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। লাশ উদ্ধার করে থানা প্রাঙ্গণে নিয়ে যায়। ঘাতক বাসটিকে পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এদিকে নিহতের আত্মীয়-স্বজন ময়নাতদন্ত না করেই লাশ দাফনের অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট যান। জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়ে রাতে থানা থেকে লাশ আলমডাঙ্গা মাদরাসাপাড়ার বাড়িতে নেয়া হয়। পরে জানাজা শেষে রাত ১১টার দিকে আলমডাঙ্গা দারুস সালামে লাশ দাফন করা হয়। শহিদুল ইসলামের আকস্মিক মৃত্যু সংবাদ পেয়ে স্ত্রী, কন্যা ও ভাইসহ নিকট আত্মীয়দের বুকফাটা আহাজারি এলাকার বাতাস ভারি করে তোলে। কষ্ট আর শোকের মাতমে বেদনা বিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

একই দিনে দু দফা দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেও ৩য় দফায় ঝরলো প্রাণ:  সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমেই তিনি ব্যবসার টাকা আদায় করতে যান বাড়াদী ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে। গোপালনগর থেকে ফিরে আসার পথে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন। বাড়াদী ব্রিজের নিকট নদীর পানির ভেতর মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যান। স্থানীয় মানুষজনের সহযোগিতায় ডাঙ্গায় উঠেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বণ্ডবিল রেলগেট বাজারে নিজের আড়তের সামনে পৌঁছুলে ২য় বার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। নিজ আড়তে মোটরসাইকেল উঠাতে গিয়ে তিনি আবারও মোটরসাইকেলসহ পড়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর তিনি সেই একই কালো রঙের পালসার ১২৫ সিসি (ঢাকা মেট্রো-ল- ১৭-৭৫৯০) যোগে আলমডাঙ্গায় ফিরছিলেন। এ সময় ৩য় ও জীবনের শেষ বারের মতো বিপদে পড়েন। বেলা সোয়া ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কের আলমডাঙ্গা বাসটার্মিনালের সামনে পৌঁছুলে তিনি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান।

নিহত শহিদুল ইসলামের নিজের ও পরিবার সম্পর্কিত তথ্য: পারদুর্গাপুরের মৃত মসলেম ওরফে কলিম উদ্দীনের ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে। শহিদুল ইসলাম ছিলেন ভাইদের মধ্যে নোয়া অর্থাৎ ৪র্থ। তিনি বেশ সরল-সোজা, ভাল ও ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষ হিসেবেই এলাকায় পরিচিত ছিলেন। বড়ভাই মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। সবার ছোট কিবরিয়া ইটালি প্রবাসী ছিলেন। ইতালিতে থাকাবস্থায় এক সকালে উঠে দাঁত ব্রাশ করতে করতে ছাদের ওপর পায়চারি করছিলেন। অসাবধানতাবশত পেস্টের ওপর পা পড়লে পিচলে ছাদ থেকে নিচে পড়ে তারও করুণ মৃত্যু ঘটে। শহিদুল ইসলাম ১ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলে রনি চাকরি করেন। বড় মেয়ে শিরিনা খাতুন বিবাহিত। ছোট মেয়ে রুবিনা খাতুন এ বছর এমএ পাশ করেছেন তিনি অবিবাহিতা।