Untitled

বাল্যবিয়ের মূলোত্পাটন হোক

দেশে কিছুতেই বাল্যবিয়ে বন্ধ হচ্ছে না। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে বন্ধের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে বিভিন্ন আইন। সামাজিক উন্নয়নে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী এ মহামারী দূর করতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এরপরও গণমাধ্যমে এ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশ হয় প্রায়ই। এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না।

প্রতিবছর ১০ হাজার মেয়েশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়। সমাজে মেয়েশিশুর নিরাপত্তাহীনতা, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, দারিদ্র্য এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে এ নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অতি সাম্প্রতিক ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে অল্প বয়সেই বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে অভিভাবকগণ মান-সম্মানের ভয়ে তাদের মেয়েকে অল্প বয়সেই বিয়ে দেন। এটা সুশিক্ষারই অভাবেই ঘটে। শিশুকালেই সংসার শুরু করলে রাষ্ট্র, সমাজ বা নিজ ভবিষ্যতের জন্য এদের অবদান রাখার যে সুযোগ থাকে, তা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।

অপরিণত বয়সে বিয়ের কারণে তারা ভোগে নানা রোগ-ব্যাধিতে। সঠিক মানসিক বিকাশ না হওয়ার ফলে সাংসারিক জীবনে পড়ে বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায়। এ বয়সে যে শিশুটির জন্ম দেয়, শিশুটিও ভোগে নানা শারীরিক সমস্যায়। অথচ প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হলে ওই নারী যেমন সাংসারিক কাজে অবদান রাখতে পারতো সুচারুরূপে তেমনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও কোনো বেগ পেতে হতো না। নারীর অধিকার নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কথা প্রায়ই শোনা যায়। একজন নারী শিক্ষার সুযোগ পেলে তার সামাজিক মর্যাদা আপনা-আপনিই বেড়ে যায়।

বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দারিদ্র্যকে বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো নির্বুদ্ধিতারই নামান্তর। সরকারিভাবে শিক্ষার উচ্চতর স্তর পর্যন্ত নারী শিক্ষার ব্যয় সম্পূর্ণরূপে মওকুফ হয়েছে। তাছাড়া চালু আছে বিভিন্ন উপবৃত্তি- যার আওতায় বিদ্যালয়গামী বালিকাদের বছরের বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট হারে অর্থ প্রদান করা হয়। এতে দরিদ্র অভিভাবক ওই মেয়েটির শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় সঙ্কুলানে কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়। মেয়েদের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অভিভাবক এবং সমাজের সচেতন জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে হবে। কোন কোন উপায়ে মেয়েদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, তার সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশি প্রশিক্ষিত হতে হবে। অপরাধীর শাস্তি এবং অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। বিয়ে রেজিস্ট্রেশনকালে সঠিক বয়স নিরূপণে ভোটার আইডিকার্ডের ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে ফাঁক-ফোকরের সুযোগ থাকে খুবই সামান্য। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেন কোনোমতেই দুর্নীতিগ্রস্ত না হয়ে পড়েন।

বিয়ে রেজিস্ট্রেশনকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র নেয়া যেতে পারে। এতে বিয়ে সম্পর্কিত তথ্যের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা আরও শক্ত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আইন অমান্য করলে দোষী যেই হোক তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শুধু আইন প্রণয়ন নয়, প্রয়োজন এর যথাযথ বাস্তবায়নও। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি বেসরকারি সংস্থাগুলো যারা এ বিষয়ে আগে থেকেই কাজ করে চলছে, তারা আলাদাভাবে নয় বরং সরকারের এ বিষয়ক পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় সাধন করতে পারে।