‘সূর্যই পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে’ প্রমাণ করতে দুই বাংলায় দুই ব্যক্তির সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে মহাশূন্যে যখন ক্যামেরা স্থাপন করে সফল হচ্ছে নাসা, মিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সির ছবি তুলে চমকে দিচ্ছে মানবজাতিকে, তখন দুজন বাঙালি পৃথিবীর চারদিকে সূর্য ঘোরে বলে দাবি তুলে রয়েছেন অনড় অবস্থানে। দু’বাংলার দু’বাঙালির মধ্যে একজনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার নাগদাহ ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে। নাম আমানত উল্লাহ। অপরজন কোলকাতার পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বাসিন্দা।

‘পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে’ এটাই সকলে জানেন এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। অথচ পৃথিবী সূর্যের চারদিকে নয়, বরং সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে এমন দাবি আমানতউল্লাহ’র। নিজেকে জ্যোতিবিজ্ঞানী দাবি করা আমানতউল্লাহর বক্তব্য, মানুষ ৪শ বছর ধরে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে- এমন ভুল তত্ত্বের ওপর বিশ্বাস করে আছে। তার দাবি, ‘বুধ এবং শুক্র পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে আর পৃথিবী ঘুরছে নিজের কক্ষপথে। একইসঙ্গে অন্যান্য গ্রহও ঘুরছে সূর্যের চারপাশে।’

পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। সূর্য আমাদের মিলকিওয়ে গ্যালাক্সির ওরিয়ন বা কালপুরুষ বাহুতে কীভাবে সেকেন্ডে কতো কিলোমিটার গতিতে ছুটছে, সূর্যের চারপাশে পৃথিবী কতো কিলোমিটার গতিতে ছুটছে, ঘুরছে তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এরপরও চুয়াডাঙ্গার এই ব্যক্তির দাবি ঠিক তার উল্টো। তার এই দাবির কথা ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে।

অপরদিকে কোলকাতার কার্তিকচন্দ্র পাল নামের এক ব্যক্তি একই মত নিয়ে নাছোড়বান্দা হয়ে রয়েছেন। এই তত্ত্ব প্রমাণ করতে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন তিনি। এলাকার মানুষ তাকে কেসি পাল বলেই চেনেন। প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি তার বিশ্বাস করা তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হাওড়া স্টেশন, ডালহৌসি চত্বর, কোলকাতা বইমেলা, এমনকি চলন্ত বাসেও তার পোস্টার এমনকি নিজের হাতে আঁকা ছবি, পোস্টার নিয়ে প্রচার চালিয়ে আসছেন। শুধু বিশ্বাসী নন বরং তার তত্ত্বকে প্রমাণ করার জন্য মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসাসহ ইংল্যান্ডের রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতেও চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি।

পৃথিবীকে তিনি একটি মৃত নক্ষত্রর সঙ্গে তুলনা করেছেন আর সূর্যকে বলেছেন ‘পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে চলা একটি গ্রহ, এমনকি চাঁদও সূর্যের মতো পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরা একটা গ্রহ। তার মতে পৃথিবীর আহ্নিক গতি আছে, তাই দিনরাত্রি হয়, কিন্তু পৃথিবীর বার্ষিক গতি নেই, কিন্তু পৃথিবীর চারদিকে সূর্য ঘুরছে বলেই ঋতু পরিবর্তন হয়।’

কার্তিক চন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার আনুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর কিছুদিন কাজকর্মের জন্য কোলকাতায় থাকেন, পরে তিনি ইন্ডিয়ান আর্মিতেও যোগ দেন। এইরকম পাগলামির জন্য পরে তাকে সেখান থেকেও বহিষ্কার করা হয়। সম্প্রতি তাকে নিয়ে একটি বাংলা সিনেমাও তৈরি হয়। অরিজিৎ বিশ্বাসের বাংলা সিনেমা ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে’তে অভিনয় করেছেন মেঘনাদ ভট্টাচার্য, চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, অঞ্জন দত্ত, পরান বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখরা।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গার আমানতউল্লাহ বলছেন ‘মানুষ ৪শ বছর ধরে ভুল তত্ত্বের ওপর বিশ্বাস করে আছে। পৃথিবী নয়, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে এটাই চিরন্তন সত্য।’ তার দাবি বুধ এবং শুক্র পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। আর পৃথিবী ঘুরছে নিজের কক্ষপথে। পাইকপাড়া গ্রামের জীর্ণ কুঠিরে বসে ২৬ বছর ধরে তিনি গবেষণার পর পৃথিবীকেন্দ্রিক ‘বিশ্বতত্ত্বের মডেল’ আবিষ্কার করেছেন। নানা জায়গা থেকে সাধারণ মানুষ তার ‘আবিষ্কার’ দেখতে আসেন। বিভিন্ন মেলায় তিনি বিজ্ঞান বিষয়ের আবিষ্কার প্রদর্শন করেন। এই কাজ করতে গিয়ে তাকে বিক্রি করতে হয়েছে পৈত্রিক জমি। আমানতউল্লাহ জানান, নিজের বাড়িতে অনেকগুলো মডেল তৈরি করেছি। ‘পৃথিবী তত্ত্বের’ ওপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছি। বইগুলোতে গবেষণার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে।’ সরকারের সুদৃষ্টি পড়লে তার আবিষ্কারের মাধ্যমে দেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে পারবেন বলেও বিশ^াস করেন তিনি। তার এই তত্ত্ব স্থানীয় অনেকেই বিশ্বাস করেছেন। অনেকের কাছেই আবার তিনি হয়েছেন হাসির পাত্র। আমানতউল্লাহর দাবি, ‘অনেক গবেষণার শুরুতেই বিজ্ঞানীদের পাগল বলে উপহাস করা হয়েছে, আর নিজের গবেষণার প্রতি যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে তার। যদিও বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট জানাচ্ছে, এই দাবি ভুল।’

প্রসঙ্গত: ‘পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে’ এই কথা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য। এই সত্য প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত করে প্রাণ দিতে হয়েছিল জ্যোর্তিষবিজ্ঞানী ব্রুনোকে। এরপর ১৬ শতকের অন্যতম জ্যোতিষবিজ্ঞানী নিকোলাস কোপার্নিকাস ‘পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে’ এই তথ্য প্রতিষ্ঠিত করেন। পরে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও তা প্রমাণ করেন। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় এটা প্রমাণিত হলেও দু’দেশের দুজন বাঙালির দাবি কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও বিজ্ঞানিদের কাছে এ দাবি হাস্যকর। কারণ, জ্যোতিবিজ্ঞান এগিয়েছে বহুদূর।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More