চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাদহের করোনা সমাচার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দর্শনার দক্ষিণচাঁদপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় বৃদ্ধ কাওসার আলী শাহ’র। রাতে তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এছাড়া গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দুই নারীসহ সাতজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মেহেরপুরের বামন্দী পশ্চিমপাড়ায় উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে জয়নাল হোসেন নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। মেহেরপুরে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন আরও দুই নারী। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে আব্দুর রহমান নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে তার মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের নিজবাড়িতেই মৃত্যু হয় শ্রমিক নেতা কাওসার আলী শাহ’র। বিকেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। রাতে কাওসার আলীর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। কাওসার আলী বাড়িতে থাকায় পরিবারের অন্য সদস্যরা বাইরে যাতায়াতের ফলে এলাকায় করোনা ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তবে ওই বৃদ্ধের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। বৃদ্ধ কাওসার আলী শাহ (৭৩) দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে। দর্শনা পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি মোটর শ্রমিক নেতা ছিলেন।
এদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দুই নারীসহ নতুন আরও ৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাতে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ৩১টি রিপোর্ট আসে। তার মধ্যে ৭ জনের পজিটিভ। নতুন শনাক্ত রোগীর মধ্যে দর্শনার ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দামুড়হুদার দশমীপাড়ার এক নারীকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। বাকি ৫ জন বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। করোনার উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য গতকাল আরও ১৮টি নমুনা পাঠানো হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ২২২ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন এবং ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের বৃদ্ধ কাওসার আলী শাহ বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে রয়েছেন। তার শ্বাসকষ্ট, কাশি ও জ্বর ছিলো। বাড়িতে থেকে সুস্থ না হওয়ায় করোনা পরীক্ষার জন্য ২৮ জুন রোববার তাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে কাওসার আলী শাহ আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেলা ১২টার দিকে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। পরে কাওসার আলী শাহ’র মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই বৃদ্ধের করোনা পজিটিভ হলে পরিবারের সদস্যসহ অন্যরাও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিকালে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে সরকারি নির্দেশনা মেনে স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি দাফনকার্য সম্পন্ন হয়। মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার করোনা পরীক্ষার রিপোর্টে ওই বৃদ্ধ করোনা পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়। তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে ৩১টি নতুন রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় দুজন, আলমডাঙ্গায় একজন, জীবননগর উপজেলায় দুজন ও দামুড়হুদা উপজেলায় দুজন আক্রান্ত হয়েছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের এক ব্যাক্তি অসুস্থ হয়ে বেশকয়েক দিন বাড়িতে ছিলেন। ২৮ জুন ওই ব্যক্তি ও তার স্ত্রী করোনা পরীক্ষার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেন। রেজাল্টে ওই নারীর করোনা পজিটিভ আসে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার ৩৭ বছর বয়সের এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হয়েছে। সদর উপজেলার গবরগাড়া গ্রামের ৩৪ বছর বয়সের এক ব্যক্তির শরীরে করোনা পজিটিভ হয়েছে। দামুড়হুদা দশমীপাড়ার ৩৫ বছর বয়সের এক নারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের এক বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। জীবননগর উপজেলার বেনিপুর গ্রামের এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জীবননগর পৌর এলাকার শাপলাকলিপাড়ার ৪১ বছর বয়সের এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। দামুড়হুদা দশমীপাড়ার ওই নারীকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আবু হেনা মো. জামাল শুভ জানান, কাওসার আলী শাহ’র করোনা উপসর্গ থাকায় তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেসময় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু তারা বাড়িতে নিয়ে যায়। দুপুরে মারা যায়। রাতে তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। নিয়ম মেনে দাফন করা হয়েছে লাশ। বৃদ্ধের পরিবারের বাকি ৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় মোট ২২২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় একজন ও দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া তিনজনই পুরুষ। সুস্থ হয়েছেন ১৩১ জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তরা হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পূর্ব ২৪ ঘন্টায় আরও দুজন করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছেন। তারা হলেন, গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামে মৃত্যুবরণকারী আপেল উদ্দীনের বোন ও মেহেরপুর ঘোষপাড়ার এক নারী। যিনি একটি হাসপাতালের কর্মচারী। অপরদিকে, মঙ্গলবার সকালে করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে বামন্দী পশ্চিমপাড়ায় জয়নাল হোসেন (৬৭) নামের একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করেছে। গতকালের দু’জন আক্রান্ত নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ জন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনাক্ত হওয়া বেসরকারী একটি হাসপাতালের ওই কর্মচারী কয়েকদিন থেকে সর্দি-জ্বরে ভুগছিলেন। ২৮ জুন তিনি নমুনা প্রদান করেন। নমুনা দেয়ার পর তিনি চুয়াডাঙ্গায় শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে, গত ২১ জুন সাহারবাটি গ্রামের ভূষিমাল ব্যবসায়ী আপেল উদ্দীন উপগর্স নিয়ে মারা গেলে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ হন। তার বাড়ি লকডাউন করে তার সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে সোমবার আপেলের স্ত্রী, নওপাড়া গ্রামের এক আত্মীয় করোনায় আক্রান্ত হন। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার তার বোন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুস্থ আছেন উল্লেখ করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম রিয়াজুল আলম বলেন, তাদেরকে নিজ বাড়িতে রুম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন গাংনী হাসপাতালের বিশেষ চিকিৎসা দল।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে বামন্দী পশ্চিমপাড়ার নিজ বাড়িতে জয়নাল হোসেন মৃত্যুবরণ করলে করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে সতর্কতা দেখা দেয়। মৃত্যুর আগে কয়েকটি উপগর্স বিবেচনা নিয়ে তার নমুনা সংগ্রহ করে গাংনী হাসপাতালে। বিকেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তার দাফন করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জয়নাল হোসেন একজন চিহ্নিত মাদকসেবী। পেশাগত কোন কাজ না থাকলেও নেশার তাড়নায় দিনের বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন স্থানে যাওয়া আসা করতেন। এক সপ্তাহ ধরে তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম রিয়াজুল আলম বলেন, নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে মরদেহ বিশেষ ব্যবস্থায় দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এইকসাথে তার সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তাদেরকে সঙ্গরোধ (কোয়ারিন্টিন) করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্ত ৭৬ জনের মধ্যে সদরে ৩৭, গাংনীতে ৩৩ ও মুজিবনগরে ৬টি। এর মধ্যে মোট সুস্থ হয়েছেন ২৫ জন আর মৃত্যু ৫ জনের। সুস্থদের মধ্যে সদরে ১২, গাংনীতে ১০ ও মুজিবনগরে ৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে অন্যত্র প্রেরণ করা হয়েছে ৫জনকে। তাই জেলায় বর্তমানে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৩৪ জন বলে সির্ভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে।
কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া বৃদ্ধের নাম আব্দুর রহমান (৬৫)। তিনি উপজেলার হেলাই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ বেশ কিছু রোগে ভুগছিলেন। মারা যাওয়া ব্যক্তির পুত্রবধূ শিউলি বেগম জানান, তার শ্বশুরের উচ্চ রক্তচাপ ছিলো। এছাড়া কয়েকদিন ধরে পাতলা পায়খানা হচ্ছিলো। গতকাল সোমবার থেকে জ্বর ও হালকা শ্বাসকষ্টও শুরু হয়। তার প্র¯্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। সকালে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। শিউলি বেগম জানান, তার শ্বশুর কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত কি না, জানার জন্য শ্বশুরের মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুলতান আহমেদ জানান, মৃত আব্দুর রহমানের জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বেশকিছু রোগ ছিলো। রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদন এলে বোঝা যাবে তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত কি না। এর আগে গত রোববার রাতে একই গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমেদ (৫০) করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তিনি জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More