চুয়াডাঙ্গার পল্লীচিকিৎসক মুনিয়া

নজরুল ইসলাম: চিকিৎসক বা ডাক্তার হলেন একধরনের স্বাস্থ্য সেবা প্রদায়ক, যাদের পেশা হলো শারীরিক বা মানসিক রোগ, আঘাত বা বিকারের নিরীক্ষণ, নির্ণয় ও নিরাময়ের দ্বারা মানুষের স্বাস্থ্য বজায় রাখা বা পুনর্বহাল করা। যারা চর্চার প্রতি নিবিষ্ট হন তাদের সেই রোগের বিশেষজ্ঞ বা ¯েপশালিস্ট বলা হয়। অন্যরা যারা ব্যক্তিকেন্দ্রিক, পরিবারকেন্দ্রিক, জনগোষ্ঠীকেন্দ্রিক ইত্যাদি বিভিন্ন ভিত্তিতে, বয়স রোগ নির্বিশেষে, ক্রমান্বয়ে বা সর্বতভাবে সাধারণ মানুষের নানারকম রোগবিকারাদির সাধারণ চিকিৎসা করে থাকেন তাদের জেনারেল প্রাক্টিশনার বলা হয়। বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা। সেই সাথে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে এবং হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে গ্রামের মানুষ। করোনার পাশাপাশি প্রতি ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে ঠা-াজনিত রোগ। যে কোন সময়ের চাইতে এ মরসুমে ঠা-াজনিত সমস্যা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠিক তখনি চুয়াডাঙ্গার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত ও ডাক্তার ফউজিয়া দিবা মুনিয়া সার্বক্ষনিক অর্থ ছাড়াই দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। অর্থ নয় চিকিৎসা সেবা দিয়ে কাউকে সুস্থ করতে পারার মধ্যেই তার প্রাপ্তি ও তৃপ্তি। ফলে মুনিয়ার চিতিৎসা নিয়ে গ্রামের আজ অনেকেই খুশি।
বলা হয় ডাক্তারি পেশা একটি মহান মানবিক পেশা। ডাক্তারি পেশা ও মানবিকতা একই সুতার দুই মাথা। যেকোনো দৈর্ঘ্যের একটি সুতাকে যেমন এক মাথা করা যাবে না তেমনি ডাক্তার শব্দটা থেকে মানবিকতাকে আলাদা করা যাবে না। ডাক্তারের কাজ অসুস্থ মানুষের প্রাণ বাঁচানো। আর শুধু ডাক্তার কেন? প্রতিটি মানুষেরই উচিত অন্য মানুষের প্রাণ বাঁচানো। তবে এখানে ডাক্তারদের ওপর মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট ও বিশেষভাবে অর্পিত। যিনি ডাক্তার তিনি একজন মানুষও। এমনিতেই একজন মানুষ হিসাবেও অন্যের প্রাণ বাঁচানোর দায়িত্ব তার রয়েছে। তিনি বিশেষভাবে একজন ডাক্তার হওয়ায় মানুষের প্রাণ বাঁচানোর ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব অন্য মানুষের থেকে আলাদা। এ জন্যই একজন সাধারণ মানুষ মানবিক না হলেও একজন ডাক্তারকে অতি মানবিক হতে হয়। তাদেরই একজন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের সাবেকে বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আহম্মদ আলীর নাতনী মসলেম উদ্দিনের মেয়ে উচ্চশিক্ষিত (রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স) এবং ডিএমএপি মা ও শিশুরোগ চিকিৎসক (অধ্যায়ানরত) ডাক্তার ফউজিয়া দিবা মুনিয়া। জীবননগরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি গ্রামের বাড়ি ঘরের সাথে খুলে বসেছেন চিকিৎসা কেন্দ্র। পল্লী গ্রামে একজন মহিলা চিকিৎসক পেয়ে গ্রামের মানুষ খুবই খুশি। বিশেষ করে মেয়েরা তারা তাদের রোগের কথা পুরূষ ডাক্তারের নিকট প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে। সেই ক্ষেত্রে একজন নারীর কাছে নিজের রোগের ব্যাপারে অবলীলায় সবকিছু খুলে বলতে লজ্জাবোধ করেন না। যার কারণে নারীদের চিকিৎসা নারীদের কাছে ভালো হয়। মুনিয়ার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা গ্রামের বেলি খাতুন বললেন, ডাক্তার হিসাবে তিনি যে সেবা দিচ্ছেন তাতে আমাদের সবদিক থেকে সাশ্রয়। আমাদের বাড়ির সবাই মুনিয়ার কাছে চিকিৎসা নিয়ে থাকি। ডাক্তার মুনিয়া জানালেন, বর্তমানে ঘরে ঘরে সর্দি, জ্বর, কাশি, মাথাব্যাথা, শরীরের দুর্বলতা, খাওয়ায় রুচি না থাকা রোগী বেশি আসছে। আসলে মানুষ ডাক্তারের কাছে এসেই সাথে সাথে সুস্থতা কামনা করে। আমার চিকিৎসা পদ্ধতি রোগির মুখের বর্ণনাশুনে প্রয়োজনবোধে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে আনিয়ে প্রাথমিক ১-২ ডোজ ওষুধ দেয়। তার পর গতিবিধি বুঝে এক সপ্তাহ কিংবা দু’সপ্তাহের ওষুধ দেয়া হয়। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখি। যখন রোগীর মুখে শুনতে পায় সে এখন সুস্থ তখন আমার খুব ভালো লাগে। আমার উছিলায় কেউ সুস্থ হয়েছে। অর্থ ইনকামের উদ্দেশ্যে এ পেশা বেঁচে নেইনি মানবিকতা থেকে মানুষ সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের সুস্থতার মধ্যেই আমার প্রাপ্তি ও তৃপ্তি নিহিত। তাই প্রতিটি রোগীকে চিকিৎসা দেবার সময় নিজের রক্তের মানুষ মনে করে সেবা দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি মাত্র। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মুনিয়ার পিতা মসলেম উদ্দিন জানান, সময় সময় মেয়েকে মা-বাবা মিলে সহযোগিতা করতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা রাত-দিন নেই শুধু চেম্বারে না ডাক পড়লে ছুটে যায় রোগীর বাড়িতে।
অপরদিকে, মানবিকতা হচ্ছে ডাক্তারদের পেশাগত গুণ বা পরিচয়। কিন্তু ইদানীং ডাক্তারদের মূল পরিচয় মানবিকতা থেকে আমাদের বেশীর ভাগ ডাক্তারই আজ বিযুক্ত হয়ে পড়েছেন। তারা মানবিকতার স্থলে বেনিয়া ব্যবসাকে প্রতিস্থাপন করেছেন। হয়তো এককালে ডাক্তাররা ঠিকই মানবিক ছিলেন। কিন্তু আজ মানবিকতা ভুলে ডাক্তাররা মানুষের প্রাণ জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। টাকার লোভে ডাক্তাররা তাদের মূল ইথিকস মানবিকতা আজ বিসর্জন দিয়েছেন। নামাজ না পড়লে যদি ইমাম থাকা না যায়, তাহলে ইথিকস বিসর্জন দিলে কি ডাক্তার থাকা যায়? নামাজ না পড়ে যদি ইমামতির দাবি অবৈধ হয়, তবে ইথিকস বিসর্জন দিয়ে ডাক্তার দাবিও অবৈধ। একজন ডাক্তার হওয়া হয়তো সহজ কিন্তু সারা জীবন ইথিকস নিয়ে ডাক্তার থাকতে কজন পারছেন? এটা একটা বড় প্রশ্ন। আমাদের দেশে এখনো অনেক মানবিকতাপূর্ণ ভালো ডাক্তার রয়েছেন। যারা এখনো তাদের ইথিকস টাকার কাছে বিক্রি করেননি। তারা সত্যিকার ডাক্তার। তারা মানুষের প্রাণ বাঁচানোকে তার ডবল দায়িত্ব হিসেবেই দেখেন। একটি দায়িত্ব মানুষ হিসেবে, আরেকটি ডাক্তার হিসেবে। কাজেই একজন ডাক্তারকে আগে মানুষ হয়ে পরে ডাক্তার হতে হয়। মানুষ না হয়ে, যারা শুধু ডাক্তার তারাই ভুয়া ডাক্তার। কারণ মানবিকতাই একজন ডাক্তারের মূল পেশাদারিত্ব। টাকার জন্য অনেক ডাক্তার তাদের মূল পেশাদারিত্ব বিসর্জন দিয়ে বেনিয়া পেশাদারিত্ব গ্রহণ করেছেন। তাই তারা আর ডাক্তার থাকেন না, হয়ে যান টাকার জন্য বেনিয়া মহাজন। নীতিহীন ডাক্তাররা মানুষের জীবনকে পণ্য বানিয়ে সেই পণ্যকেই টাকা মনে করেন। রোগী বাঁচবে না মরবে, সে কথা না ভেবে এরা শুধু একটা কথাই ভাবেন আর তা হলো- এই জব্বর পণ্য থেকে কত বেশি টাকা কামানো যাবে? তবে ডাক্তার মুনিয়া তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কোনোপ্রকার পরামর্শ ফি ছাড়াই দিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তন চিকিৎসা সেবা। একজন বিশেজ্ঞ জনৈক ডাক্তার বেেলন, চিকিৎসার সঠিক ব্যবহার শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের বুনিয়াদী পঠনভিত্তিক জ্ঞানের উপরেই নির্ভর করে না, বরং এর কার্যকারিতা ও প্রচলন প্রায় স¤পূর্ণরূপেই নির্ভর করে এই বিজ্ঞানকে পরিশীলিতভাবে প্রয়োগ করবার তথা ফলিত কলাবিদ্যায় পারদর্শীতার উপর। চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য সেবার অন্যান্য পেশাদারী ব্যক্তিদের সাথেও অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More