দামুড়হুদায় ভিক্ষুকের স্বপ্ন পূরণ, ২০ বছর ধরে নিজহাতে গড়লেন দো-তলা বসতঘর॥

,দামুড়হুদা অফিস: সকলের সাধ থাকে মাথা গোঁজার ঠাইটুকু একটু ভালো করে গড়ে তুলতে। স্বাদ থাকলে ও সামর্থ্য না থাকায় অনেক অসহায় মানুষ সেটা করতে পারেন না। দামুড়হুদার ভিক্ষুক রহমত আলি ওরফে নমেন আলির (৫৫) এমনই স্বপ্ন ছিল। দীর্ঘদিন পরে হলেও তিনি সেই স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে সরকারি জমির ওপর ২০ বছর ধরে নিজ হাতে সামর্থ্য অনুযায়ী তিলে তিলে গড়ে তুলছেন দ্বিতল বসতঘর।
দীর্ঘদিন আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। রয়েছে এক পুত্র সন্তান। দিনমজুর সন্তান তার বাবাকে নিজের কাছে রাখতে চাইলেও সেখানে থাকতে নারাজ তিনি। দিন শেষে রাতটুকু নিশ্চিন্তে থাকতে ভিক্ষাবৃত্তির অর্থ দিয়ে প্রতিদিন বিকালে নিজে ঘর মেরামতের কাজ করে যেতেন তিনি। এভাবে ২০ বছর ধরে কাজ করে গেছেন।
দামুড়হুদা উপজেলার কাদিপুর গ্রামের মৃত কিয়ামুদ্দিনের ছেলে ভিক্ষুক রহমত আলি ওরফে নমেন আলি জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর মহাসড়কের দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি ইউনিয়ন পরিষদ ও পশুহাটের অদূরে সড়ক বিভাগের জমির ওপর একটি ঝুপড়ি ঘর করে বসবাস করে আসছেন। ঝড়-বৃষ্টিতে বিভিন্ন সময় তাকে সমস্যায় পড়তে হতো। এমন অবস্থায় ২০০০ সালে তিনি সেখানে নিজহাতে ইটের গাথুনি দিয়ে থাকার মতো ছোট একটি পাকা ঘর তৈরি করেন। তখন থেকেই তার পরিকল্পনা, ওই ঘরের ওপরে আরো একটি ঘর বানানোর। সেই সময় থেকে সারাদিনের ভিক্ষাবৃত্তির অর্থ দিয়ে কিছু কিছু ইট, সিমেন্ট ও বালু ক্রয় করতেন। আর প্রতিদিন বিকালে একটু একটু করে গাথুনির কাজ করতেন। ২০ বছর পর এখন সেখানে নিচতলায় দুটি রুম ও ওপরে এক রুমের ঘর তৈরি হয়েছে। নিচে দুটি ঘরের মধ্যে একটিতে নিজে থাকেন তিনি। থাকার ঘরে মেঝে ও দেওয়ালে টাইলস বসানো, পরিপাটি। তবে পাশের ও ওপরের ঘরগুলো দেখা সম্ভব হয়নি। তিনি সেগুলো দেখাতে নারাজ।
রহমত আলি জানান, তার দোতলা ঘরে বাসবাস করার স্বপ্ন ছিল। তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিভিন্ন সময় সড়ক বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলে তিনি তার বসতঘরের ওপর উঠে বসে থাকতেন। তাকে নামানো যেতো না। এছাড়াও এলাকাবাসীর অনুরোধে উচ্ছেদ থেকে রক্ষা পান তিনি।হাউলি ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন বলেন, ভিক্ষুক রহমত আলি ওরফে নমেন আলি প্রায় ৩০ বছর আগে এখানে একটি ঝুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করে। ২০০০ সালের দিকে তিনি কাদা-মাটি ও ইট দিয়ে একটি পাকা ঘর তৈরি করে পরে ধীরে ধীরে একইভাবে ইট কুড়িয়ে, সামান্য কিছু সিমেন্ট কিনে নিজ হাতে দোতালার কাজ শুরু করে। প্রায় ২০ বছর ধরে তিলে তিলে সম্প্রতি সিঁড়িসহ দোতালার কাজ শেষ করে এখানে বসবাস করছেন। সড়ক বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে তিনি দোতলায় উঠে বসে থাকতেন। তাকে কোনভাবেই নামানো যেতো না। এছাড়াও ভিক্ষুক হিসাবে সকলেই ঘরটি না ভাঙার অনুরোধে অভিযান থেকে রক্ষা পায়। বর্তমানে তিনি স্বপ্ন পূরণের তৃপ্তি নিয়ে এখানে বসবাস করছেন।# #

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More