চুয়াডাঙ্গায় উপসর্গবিহীন করোনা সংক্রমণ : এক নারীসহ আরও ৩ জন আক্রান্ত

আইসোলেশনের হলুদ জোনে ভর্তির আধাঘণ্টার মাথায় দর্শনার এক বৃদ্ধের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ৬৫ বছর বয়সী বদর উদ্দিনের মৃত্যু হয়। তিনি সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন। বদর উদ্দিনকে আইসোলেশন ইউনিটের হলুদ জোনে নেয়ার আধাঘণ্টার মাথায় তার মৃত্যু হয়। বদর উদ্দিন (৬৫) দর্শনার শ্যামপুর গ্রামের মৃত দিদার ম-লের ছেলে। গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় করোনা উপসর্গে চারজনের মৃত্যু হলো।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় নতুন আরও তিনজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন আরও ১০ জন। সোমবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে আসা নতুন ৯টি রিপোর্টের মধ্যে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তবে, নতুন আক্রান্তদের শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। সবাই সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনার উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য নতুন ১৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২১৫ জন। নতুন ১০ জনসহ মোট সুস্থ হয়েছেন ১৩১ জন।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গার রেডজোন চিহ্নিত এলাকায় ঢিলেঢালাভাবে লকডাউন কার্যকর হচ্ছে। দর্শনা ও জীবননগর পৌর এলাকার ৭টি ওয়ার্ডে আংশিক লকডাউন থাকলেও সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য বিধি না মেনে নিজেদের ইচ্ছামতো চলাফেরা করছেন। যার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে থাকছে প্রতিদিন। আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দি গ্রামে লকডাউন চলছে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসারে। গ্রামের মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসছে না। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে উপসর্গ না থাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। উপসর্গ না থাকায় সবাই বাইরে চলাফেরা করছে স্বাভাবিকভাবে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে উপসর্গ নিয়ে মোস্তাক আহমেদ নামের এক কাপড় ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি গত চারদিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। কুষ্টিয়ায় উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বেলা ১২টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে বিআরবি গ্রুপের হিস্ব শাখায় কর্মরত আলী আহম্মেদ লিটনের মৃত্যু হয়। জ¦র ও শ^াসকষ্ট জনিত অসুস্থতা নিয়ে এলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এছাড়া, রোববার রাতে জ¦র ও শ^াসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহরের হরিশংকরপুর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ঈদের পর থেকে রোগী বাড়তে থাকে অনেক। নতুন করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। যার ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সোমবার রাতে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার নতুন ৯টি রিপোর্ট আসে। তার মধ্যে ৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। আক্রান্ত হয়েছেন জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি রাজশাহীতে ইষ্টার্ন ব্যাংকে কর্মরত। গত ২৬ জুন বাড়ি ফেরেন তিনি। ওই ব্যাংকের এক সদস্য করোনা পজিটিভ হলে তিনিও পরীক্ষা করান। তার রিপোর্টও পজিটিভ আসে। দর্শনা মোবারকপাড়ার ঢাকা ফেরত এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হয়েছে। তিনি ঢাকাতে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২৪ জুন বাড়ি ফেরার পর তিনি করোনা পরীক্ষা করান। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের ২২ বছর বয়সী এক নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি এখন নিজ বাড়িতে আছেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের হলুদ জোনে নেয়ার পরপরই মারা যান দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা শ্যামপুর গ্রামের মৃত দিদার ম-লের ছেলে বৃদ্ধ বদর উদ্দিন। তিনি সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত থাকায় হাসপাতালের ব্ল্যাড ব্যাংক ইনচার্জ তার নমুনা সংগ্রহ করেন। বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বদর উদ্দিনের মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবির বলেন, করোনার প্রটোকল দিয়ে তার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৃদ্ধের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। বিকেলে শ্যামপুর গ্রামের কবর স্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়। করোনার রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে তিনি আক্রান্ত ছিলেন কিনা।
এদিকে বদর উদ্দিনের পরিবারের দাবি, বদর উদ্দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। বাড়ির বাইরে বের হওয়ার মতো ক্ষমতাও ছিলো না। সুতরাং করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি একটু অস্বাভাবিক।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গার রেডজোন চিহ্নিত দুটি পৌর এলাকায় ঢিলেঢালা ভাবে লকডাউন চলছে। জীবননগর ও দর্শনা পৌর এলকার ৭টি ওয়ার্ডে আংশিক লকডাউন চলছে। সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার প্রবণতা বেশি। মানুষ বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বেশি অবস্থান করেছে। মাস্ক ব্যাবহার করছে না বাইরে চলাচল করার সময়। তাই করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়ানের হাড়োকান্দি গ্রামে লকডাউন চলছে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে। কারণ এ গ্রামে কয়েক দিনেই করোনা রোগী বেড়ে যায়। মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না।
দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান মাথাভাঙ্গাকে বলেন, পৌর পরিষদের সকল সদস্য প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। যেখানে শিক্ষিত মানুষরা লকডাউন মানছে না, সেখানে দর্শনার সাধারণ মানুষ সহজে মানতে চায়? আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বারবার মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, স্বাস্থ বিধি মেনে চলার কথা ও অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়ার জন্য। মানুষকে বোঝানো কঠিন ব্যাপার।
কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে উপসর্গ নিয়ে মোস্তাক আহমেদ নামের এক কাপড় ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি গত চারদিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এছাড়াও তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। মোস্তাক আহমেদ (৫০) উপজেলার হেলাই গ্রামের মতলেব ম-লের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী। হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে গিয়েছিলেন মোস্তাক। সেখান থেকে তাকে নমুনা ও অক্সিজেন দেয়ার কথা বলা হয়। তার পরিবারের সদস্যরা নমুনা ও অক্সিজেন না দিয়ে বাড়ি চলে আসে। এরপর রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। সোমবার সকাল ৯টার দিকে এলাকার কয়েকজন যুবক তার দাফন কাজ সম্পন্ন করে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানিয়েছেন ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৮৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের আরএমও ডা. সুলতান আহমেদ জানান, হেলাই গ্রামের মোস্তাক আহমেদ মারা যাওয়ার একঘণ্টার মধ্যেই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির বাড়ির কেউ বাইরে ও বাইরে থেকে ভিতরে না প্রবেশ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে বিআরবি গ্রুপের এক কর্মকর্তাসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বেলা ১২টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে বিআরবি গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের একাউন্টস বিভাগে কর্মরত আলী আহম্মেদ লিটনকে (৪৮) জ¦র ও শ^াসকষ্ট জনিত অসুস্থতা অবস্থায় এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া, রোববার রাতে কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকার বাসিন্দা হুকুম আলী ছেলে হাবিবুর রহমান (৪০) জ¦র ও শ^াসকষ্ট জনিত কারণে হাসপাতালের ৬নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে নিশ্চিত করেছেন। পরে পিসিআর ল্যাবে প্রাপ্ত ফলাফলে জানা যায় তিনি কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রান্ত ছিলেন। মৃত আলী আহম্মেদ লিটনের স্বজনরা জানান, সোমবার সকালে বিআরবিতে নিজ অফিস কক্ষে প্রধান হিসাব রক্ষক পদে কর্মরত অবস্থায় লিটন গুরুতর অসুস্থ হয়। এসময় তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। তিনি কয়েকদিন ধরেই জ্বর ও সর্দিতে ভুগছিলেন। সকালে তার অফিসিয়াল ট্যুরে খুলনায় যাওয়ার কথা ছিলো। লিটন চৌড়হাস এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম বাবুর পুত্র। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ২৫০ শয্যা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, আলী আহম্মেদ লিটনের করোনা উপসর্গ ছিলো। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমনে শনাক্তকৃত ৯ জনের মৃত্যু হয় এবং উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More