ভারত থেকে বেনাপোল হয়ে ১৯ দিনে দেশে ফিরেছে ২৮০৩ জন : রোববার থেকে দর্শনা চেকপোষ্ট হয়ে ফেরানোর প্রস্তুতি

কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে ফের তিন লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হলেও নতুন সংক্রমণ কিছুটা কম পাওয়া গেছে, তিন দিন পর মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজারের নিচে নেমেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, শনিবার সকালের আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে তিন লাখ ২৬ হাজার ৯৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আর একই সময় আরও ৩৮৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকেক ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞায় আটকা পড়াদের মধ্যে যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট হয়ে ১৯দিনে দেশে ফিরেছেন ২ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৬৩১ জন। রোববার (১৬ মে) থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনাস্থ জয়নগর- গেদে সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরবে আরও যাত্রি। এদের চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন রাখা হবে। এ সময় চুয়াডাঙ্গায় ভারতী ধরণের করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার আতঙ্কে ভুগছেন অনেকে। তবে জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির তরফে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, বিজিবি-৬ এর অধিনায়কসহ অনেকে।

অপরদিকে জানা গেছে ভারতে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ভারতে প্রতিদিন তিন লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হল। মাঝে টানা কয়েকদিন চার লাখেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। তবে এদিন আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। শনাক্ত নতুন রোগীদের নিয়ে দেশটিতে মোট করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার ৯০৭ জনে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে দেশটি। করোনাভাইরাস মহামারীতে মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় স্থানে থাকা দেশটিতে মোট মৃত্যু দুই লাখ ৬৬ হাজার ছাড়িয়েছে। ভারতে সংক্রমণ শহর-নগরগুলো ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ায় ভাইরাস আক্রান্ত আরও বহু লোক পরীক্ষার আওতার বাইরে রয়ে গেছে বলে ধারণা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। দেশটিতে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি হবে বলে মনে করেন তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতের পরিস্থিতিকে ‘অতিশয় উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছে। ভারতে কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে ১৮ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এদিন ৩১ মার্চের পর প্রথমবারের মতো মহারাষ্ট্রে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজারের নিচে নেমেছে। ভারতের সবচেয়ে মহামারী আক্রান্ত এ রাজ্যটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ লোক মারা গেছে। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে একদিনে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৮৪৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে রাজ্যটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৮০২ জনে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যটিতে মহামারীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভাই ও বিশিষ্ট পাঁচ চিকিৎসকসহ ১২ হাজার ৯৯৩ জন মারা গেছেন। সংক্রমণের রাশ টানতে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনে যাচ্ছে সিকিম। এই নিয়ে মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডের পর দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলের তৃতীয় রাজ্য লকডাউন জারি করল। ভারতে শনাক্ত করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা ১৯ ডিসেম্বর এক কোটি ছাড়িয়েছিল, কিন্তু এরপর ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এটি দ্বিগুণ হয়ে ৪ মে দুই কোটি ছাড়ায়। এখন দৈনিক যে হারে নতুন রোগী বাড়ছে তাতে আর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা আড়াই কোটি ছাড়াবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞায় আটকা পড়াদের মধ্যে যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট হয়ে ১৯দিনে দেশে ফিরেছেন ২ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৬৩১ জন। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান হাবিব বলেন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর ২৬ এপ্রিল থেকে ১৪মে পর্যন্ত কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নিয়ে তারা দেশে ফেরেন। “এদের মধ্যে করোনাভাইরাস পজেটিভ ছিল ১২ জনের। অপরদিকে বাংলাদেশে আটকা পড়াদের মধ্যে ২৮০ জন ভারতীয় দেশে ফিরে গেছেন।” যশোর ও বেনাপোলের ২৯টি হোটেল এখন কোয়ারেন্টিন সেন্টার। এ হোটেলগুলোসহ বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৪৪৫ জন ভারত থেকে আসা মানুষ কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এছাড়া যশোরের আশপাশের চার জেলার হোটেলগুলোও কোয়ারেন্টিন সেন্টার করা হয়েছে। জেলাগুলো হল- সাতক্ষীরা, খুলনা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল। যশোর ও বেনাপোলের হোটেলগুলোতে জায়গা না হওয়ায় ভারত ফেরত অনেককে এসব জেলায় পাঠানো হয়েছে। শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.ইউসুফ আলী বলেন, যারা করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে দেশে ফিরছেন তাদেরকে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঠানো হচ্ছে। “১০মে থেকে ১৪মে পর্যন্ত ১৪দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৬৩১ জন।” বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সরকার ভারতের করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ রোধে ২৬ এপ্রিল থেকে দুই সপ্তাহের জন্য ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।পরে আরও দুই সপ্তাহ এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এদিকে কোয়ারেন্টিন শেষে ভারত ফেরতদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বিদায় জানানো হয় এবং তাদের গাড়ির ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয় বলে জানান শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা।
‌ ভারতে যখন ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশামাল অবস্থা তখন ভারত ফেরতদের নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। এর মাঝে ১৬ মে থেকে দর্শনাসহ দেশের আরও ৩টি স্থল চেকপোষ্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারত ফেরতদের প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় পূর্বনির্ধারিত স্থানে রাখা হবে। যে হোটেলে রাখা হবে সেই হোটেল এবং খাওয়ার খরচ ওই ভারত ফেরতকেই বহন করতে হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More