শিশিরদাঁড়ির ক্ষেত্রেও পুলিশের দায়িত্বশীলতা কাম্য

শিশিরদাঁড়ির ক্ষেত্রেও পুলিশের দায়িত্বশীলতা কাম্য

কার ঘরে কে ঢুকছে, তা দেখার দায়িত্ব কি সমাজ ওই ৪ যুবককে দিয়েছে? মানুষ যেহেতু সামাজিক, সেহেতু সমাজের ভালোমন্দ দেখার দায় সমাজ অস্বীকার করতে পারে না। অপরাধ প্রবণতা হ্রাসের মধ্যদিয়ে সমাজকে সুন্দর সুশৃঙ্খল করা এবং তা অব্যাহত রাখার জন্যই আইন, আইন প্রয়োগের এতো আয়োজন। সমাজ রক্ষার নামে রাতের অন্ধকারে অন্যের বাড়ির পাশে ওৎ পেতে থাকা এবং প্রতিরোধের শিকার হলে পেশি শক্তি প্রয়োগ অবশ্যই অন্যায়। দেশের প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিমূলক অপরাধ। পক্ষান্তরে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মিথ্যার আবরণে অধিকগুরুত্ব পাওয়ার আশায় গুরুতর অভিযোগ উত্থাপনও সমর্থনযোগ্য নয়।
সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শিশিরদাঁড়ি গ্রামে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ সমাজেরই চেনা চিত্র। অসামাজিক কর্মকা-ের অভিযোগ তুলে নির্যাতন নিপীড়নের উদাহরণ যেমন রয়েছে, তেমনই সুযোগ বুঝে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার প্রবণতাও ঘুরে ফিরে পরিলক্ষিত হয়। অথচ সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান শর্ত সর্বক্ষেত্রে সত্য প্রতিষ্ঠা করা। ফলে যার অন্যায় যতোটুকু তা আইনের মাপকাঠিতে মেপে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি থেকেই মূলত শিশিরদাঁড়ির প্রকৃত ঘটনা উম্মোচনে সুষ্ঠু তদন্ত অপিরহার্য। রাতের অন্ধকারে ৪ যুবক গেলো অন্যের বাড়ি। অনৈতিক অসামাজিক কর্মকা- ধরতেই নাকি তাদের সেখানে যাওয়া। সেখানে যাওয়ার পর বাড়ির গৃহকর্তা প্রতিরোধ গড়ে তুললে তাকে মেরে আহতও করা হয়। পরবর্তিতে গৃহকর্তা অপহরণের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
শুধু গ্রামে নয়, শহরেও অনৈতিক অসামাজিক কাজের অভিযোগ তুলে এক শ্রেণির দলবদ্ধ যুবক অর্থসহ নানা সুবিধা আদায় করে। অনেকেই মানহানীর আশঙ্কায় বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন না। এ কারণেই অর্থসহ নানা সুবিধা আদায় করা ব্যক্তিদের দাপট থামে না। অবশ্যই সমাজের নৈতিক অনৈতি দেখা এবং তা থেকে প্রতিকার প্রত্যাশায় সোচ্চার হওয়া সচেতনতারই অংশ। তাই বলে সোচ্চার হওয়া মানে নিজেরাই নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়ার সুযোগ তো দেশের প্রচলিত আইনে দেয়নি। সমাজের স্বার্থেই দেশে আইন রয়েছে, আইন প্রয়োগের জন্য পুলিশসহ একাধিক সংস্থা রয়েছে। অন্যায় উৎখাত তথা অপরাধ প্রবণতা হ্রাসে সামাজিকভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সহযোগিতা করা দায়িত্বেরই অংশ। এ দায়িত্ববোধ ভুলে যে বা যারা বাড়তি দায়িত্ব পালনে মেতে ওঠে, তার বা তাদের আসল মতলব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়।
শিশিরদাঁড়ির প্রকৃত ঘটনা উম্মোচনে পুলিশি তদন্ত হওয়া দরকার। অন্যের বাড়ি যখন তখন প্রবেশ এবং বাড়ির পাশে ওৎপেতে থাকাটাও যে অন্যায় তা বোঝাতে উপযুক্ত শিক্ষা প্রয়োজন। আবার প্রকৃত সত্য আড়াল করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টাও যে দায়িত্বশীলতা নয়, তাও বোঝানো প্রয়োজন। আইনের যথযথ প্রয়োগ যেমন অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করে তেমনই অপপ্রয়োগ আস্থাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, পুলিশে অপ্রতুলতার পরও প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন পারদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে পুলিশের প্রতি প্রত্যাশাও বেড়েছে। শিশিরদাঁড়ির ক্ষেত্রেও পুলিশের দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশি আমরা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More