রমজান সামনে রেখে বাজার তদারকি জোরদার করা হোক

নিত্যপণ্যের বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, মাছ-মাংস, আটা-ময়দা, সবজিসহ সব ধরনের খাদ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, বাজারে কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি নেই। সাধারণত পণ্যের সংকট থাকলে দাম বাড়ে। কিন্তু দেশে খাদ্যপণ্যের কোনো সংকট নেই। চালের উৎপাদন, বিপণন, মজুত ও আমদানি-সবকিছুতেই এবার রেকর্ড হয়েছে। ফলে অন্তত জুন পর্যন্ত চাহিদার তুলনায় চাল উদ্বৃত্ত থাকবে।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৩ কোটি টন চাহিদার বিপরীতে সরবরাহের লাইনে আছে ৪ কোটি ৬৮ লাখ টন চাল। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত থাকবে এক কোটি ১৮ লাখ টন। আগে কখনোই এতো বেশি চাল উদ্বৃত্ত হয়নি। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও চালের দাম ক্রমাগত বাড়ছে কেন? বেসরকারি হিসাবে গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ। প্রতি বছর ভরা মরসুমে চালের দাম কমলেও এবার কমেনি, বরং বেড়েছে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বাজারে কোনো কারসাজি চলছে। বস্তুত চালের বেশির ভাগই চলে গেছে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। কারসাজি শুধু চালের বাজারে নয়, রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে, রমজান সামনে রেখে সেসব খাদ্যপণ্যও চলে গেছে সিন্ডিকেটের কবজায়। বলা যায়, বাজারে সব পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। এ প্রবণতা উদ্বেগজনক। করোনা মহামারির কারণে সাধারণ মানুষ এমনিতেই কষ্টে আছে। খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত দামবৃদ্ধি তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কাজেই জনস্বার্থে এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া সরকারের জরুরি দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই যা করা দরকার তা হলো, খাদ্যপণ্য কারা অবৈধভাবে মজুত করছে, তা অনুসন্ধান করে বের করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে শুধু মিলারদের কাছে ধান মজুত থাকতো। এবার শুধু মিলার নয়, মরসুমি ধান ব্যবসায়ী, বড় বড় অনেক কোম্পানি, এমনকি অনলাইন ব্যবসায়ীরাও ধান/চাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমাদের কথা হলো-ব্যবসা করা ভালো; তবে অতিমুনাফার জন্য অনৈতিক ও বেআইনিভাবে বেশি চাল মজুত করে মানুষের পকেট কাটা একটি অপরাধ। যারা এ অপরাধ করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।
উল্লেখ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার একটি আইন করেছে। নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ধান/চাল মজুত করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। কাজেই যারা লাইসেন্স ছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ধান/চাল মজুত করছে, আইনের দৃষ্টিতে তারা অপরাধী। তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া সরকারের দায়িত্ব। জানা যায়, কোনো কোনো স্থানে ধান ও চালের অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযান চালানো হয়নি। আমরা মনে করি, বিষয়টি জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধায় এ ব্যাপারে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। অন্যান্য খাদ্যপণ্যের কারসাজি রোধেও সরকারকে কঠোর হতে হবে। যেসব অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার জন্য সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, বাজারে প্রকৃত তদারকির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে ব্যবস্থা। রমজান সামনে রেখে এ তদারকি ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হোক।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More