শাসকদল কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের আগুন

কাঠমান্ডুতে জেনজি তরুণদের টানা বিক্ষোভ ক্রমশ সহিংস রূপ নিচ্ছে। সোমবার পুলিশের গুলিতে ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত ও অন্তত ৪০০ জন আহত হওয়ার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে শাসকদল নেপালি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে কাঠমান্ডু পোস্ট।

দুর্নীতি, অদক্ষ শাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তরুণদের আন্দোলন চলছে। প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন সোমবার ভয়াবহ রূপ নেয় যখন নিরাপত্তা বাহিনী বলপ্রয়োগ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী ঢিলেঢালা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি শত শত মানুষ আহত হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার জন্ম দেয়।

মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানী কাঠমান্ডু ভ্যালি ও আশপাশের জেলাগুলোতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা শুধু রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি নয়, রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি ও দপ্তরে হামলা চালান। ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে একাধিক স্থানে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন বিভিন্ন এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে।

দেশব্যাপী এ টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগের মুখে দীর্ঘদিন ধরেই চাপে ছিলেন তিনি। সোমবারের প্রাণহানির ঘটনায় আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠলে পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

তবে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগেও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, কেবল নেতৃত্ব পরিবর্তন নয়, তারা চায় রাজনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার ও কার্যকর জবাবদিহি। তরুণদের অভিযোগ—দীর্ঘদিন ধরে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে, অথচ শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সুশাসনের প্রশ্নে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান কাঠমান্ডু মেয়রের

এ অবস্থায় আন্দোলনকারীদের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কাঠমান্ডু মহানগরীর মেয়র বালেন্দ্র শাহ।

তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, তাই আমাদের আর কোনো জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করা উচিত নয়। জনসম্পদ আমাদের সবার যৌথ সম্পদ, এগুলোর ক্ষতি মানেই আমাদের সবার ক্ষতি। এখন আমাদের প্রজন্মকেই দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’

শাহের এই আহ্বান কিছু মহলে ইতিবাচক সাড়া পেলেও বাস্তবে রাস্তায় বিক্ষোভ এখনো থামেনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নতুন করে তরুণদের কাঠমান্ডু অভিমুখে যাত্রার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো উত্তেজনা কমিয়ে পরিস্থিতিকে সংলাপ ও সংস্কারের পথে নিয়ে আসা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তরুণদের এই আন্দোলন আগামী দিনে নেপালের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More