স্টাফ রিপোর্টার: অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, দালাল ও কথিত কিছু স্বেচ্ছাসেবকদের দৌরাত্ম্যের চরমে পেঁৗঁছেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালে জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে সেবা পেতে অভ্যন্তরীণ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হতে হচ্ছে। একদিকে দালালচক্রের অপতৎপরতা অন্যদিকে জরুরি বিভাগের কতিপয় স্বেচ্ছাসেবকের লাগামহীন দুর্নীতি। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে নাকাল রোগী ও স্বজনরা। টাকা ছাড়া মিলছে না চিকিৎসা। টাকা দিতে না পারলে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এক প্রকার জোরপূর্বক টাকা আদায় করেই রোগীদের সেবা দিচ্ছে কতিপয় স্বেচ্ছাসেবকেরা। দিনের পর দিন অনিয়ম চললেও কোনোভাবে এর প্রতিকার হচ্ছে না। এই নিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানি বেড়েই চলছে। আর প্রকাশ্যেই চলছে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা। বিভিন্ন সময় এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেও তেমন কেউ আমলে নেয়নি। এই ব্যাপারে বরাবরই নিশ্চুপ থেকে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে অনিয়মই একপ্রকার নিয়মে পরিণত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন শহরের বুদ্ধিমান পাড়ার সাইদুর রহমানের ছেলে সেলিম হোসেন। তার ক্ষতস্থানে সেলাই বাবদ ১৯শ’ টাকা দাবি করেন কতিপয় স্বেচ্ছাসেবকরা। টাকা জোগাড় করতে দেরি হওয়ায় ৪০ মিনিট বসিয়ে রাখা হয় তাকে। পরে শেষ পর্যন্ত বিভিন্নজনের থেকে ১৫শ’ টাকা ধার করে স্বেচ্ছাসেবকদের দেন। এরপরই তার ক্ষতস্থানে সেলাই করা হয়। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সেলিম হোসেন চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবাধায়ক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সেলিম গুরুতর অসুস্থ হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে গেলে সেখানে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবক উজ্জল হোসেন, রফিকুল ইসলামসহ আরো অনেকে জানান কাটা স্থানে সেলাই দিতে হবে। সেখানে সেলাই বাবদ ১৯শ টাকা প্রদান করতে হবে। এ সময় সেলিমের নিকট কোনপ্রকার টাকা ছিলো না। তার সঙ্গে আসা লোকজনের নিকট বিষয়টি জানালে সবাই কিছু টাকা দিয়ে মোট ১৫শ টাকা জোগাড় করে দিলেও নেইনি স্বেচ্ছাসেবকরা। তাদের দাবি ১৯শ টাকায় দিতে হবে। এ জন্য সেলিমকে প্রায় ৪০ মিনিট বসিয়ে রাখে তারা। পরবর্তীতে ১৫শ টাকা নিয়ে ক্ষতস্থানে সেলাই করেন কতিপয় স্বেচ্ছাসেবকরা। এরপরই তিনি প্রতিকার চেয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। এঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবাধায়ক ডা. আতাউর রহমান।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে রোগীদের হয়রানি ও ভোগান্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য। এখানে সেবা নিতে এসে দালালের খপ্পরে পড়েননি এমন সেবাপ্রার্থীর সংখ্যা হয়তো খুবই কম। হাসপাতালের কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয়কেন্দ্রের (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) মালিকেরা এই দালাল চক্র গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের দৌরাত্ম্যে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা যেমন বিপাকে পড়ছেন; তেমনি এদের অপতৎপরতার শিকার হচ্ছেন চিকিৎসকরাও। এছাড়া জরুরি বিভাগে কিছু স্বেচ্ছাসেবকের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
অভিযোগ রয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জরুরি চিকিৎসা নিতে অবশ্যই স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে দরদাম ঠিক করতে হয় রোগীদের। দরদাম ঠিক হলেই শুরু হয় সেবা নামক চিকিৎসা। আগে টাকা পরে চিকিৎসা নিয়মে বাদ যায় না অসহায়, প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র রোগীরাও। টাকা দেয়ার পরই শুরু হয় চিকিৎসা।
অন্যদিকে, হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার সুযোগে এক শ্রেণির দালালচক্র মোটা অঙ্কের কমিশনের মাধ্যমে সদর হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্থানান্তর করছে। দৈনিক এ সিন্ডিকেট ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গরিব অসহায় রোগীদের কাছ থেকে। কেউ এর প্রতিবাদ করলেই তাকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় বলে রোগীর স্বজনরা জানান। ওয়ার্ডে চিকিৎসকের সঙ্গে দালালদেরও রাউন্ড দিতে দেখা যায়। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা দিলে তাৎক্ষণিক দালালেরা নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভাগিয়ে নেয়। যেখানে বেশিরভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সদর হাসপাতালে থেকেই কম খরচে করা যায়।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.