বিতর্কিত মডেল পিয়াসা

বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা অস্ত্র ও স্বর্ণের চোরাকারবার করে অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন। মডেলিংয়ের আড়ালে তার ছিল পেশাদার অপরাধী চক্র। প্রভাবশালীদের শেল্টারে চক্রের সদস্যদের অনেকে নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যায়। পিয়াসার নেটওয়ার্কে ২০ থেকে ২৫ জন সুন্দরী রমণী রয়েছে। গুলশান, বনানী, বারিধারার অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী তাদের নিয়ে দেশের বাইরে ট্যুরে (প্লেজার ট্রিপ) যান।
মাদকদ্রব‌্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রাজধানীর গুলশান, ভাটারা ও খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা পৃথক তিন মামলায় মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে পিয়াসাকে যারা আজকের পিয়াসা বানিয়ছে তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন তার মা নব্যুয়াত আরা সিদ্দিকা রকি। পেশায় গৃহিণী রকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী। বিগত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে তিনি বেহালা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি একটি পত্রিকার প্রতিবেদককে বলেন, ছোটবেলা থেকে পিয়াসা শান্ত নম্র ছিলেন। সে চট্টগ্রাম নগরীর ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর তিনি নানার বাড়ি ঢাকার উত্তর বাড্ডায় চলে যান। ঢাকায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে (আইইউবি) ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন আসকার দীঘির পাড় আরকে মিশন গলির নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে পিয়াসা। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায়।
পিয়াসার বাবা মাহাবুবুল আলম সাবেক ফুটবলার। খেলোয়াড় কোটায় তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরি করতেন। জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চাকরি থেকে অবসরে যান। তার তিন মেয়ের মধ্যে পিয়াসা বড়। পিয়াসার গ্রেফতারের খবরে হতবম্ব আসকার দিঘীর পাড় এলাকার প্রতিবেশীরা। এ এলাকার লোকজনের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে পিয়াসার নানা উত্থান কাহিনি। চট্টগ্রাম থেকে শূন্য হাতে ঢাকায় পাড়ি দেওয়া পিয়াসা কীভাবে রাতারাতি এত অর্থবিত্ত ও গাড়ি-বাড়ির মালিক বনেছে তা নিয়েও হতবাক প্রতিবেশীরা।
এক প্রতিবেশী বলেন, পিয়াসা ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। কমার্স কলেজে পড়াকালীন সিনিয়রের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। তিনি মাদারবাড়ির এক শিল্পপতির ছেলে। ওই প্রেমিক ও এক বন্ধুর সঙ্গে একদিন পতেঙ্গা সৈকতে বেড়াতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে তার বন্ধু মারা যায়। এ ঘটনায় প্রেমিকসহ পিয়াসা আহত হন। তখনই তাদের প্রেমের ঘটনা পরিবারে জানাজানি হয়। প্রেমিকের বাবা এই সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে অন্য এক ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেন। তখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন পিয়াসা। এই ঘটনায় পিয়াসা চরমভাবে ভেঙে পড়ে। নতুন জীবন শুরু করতে পাড়ি জমান ঢাকার মামার বাড়িতে। ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। পিয়াসার বখে যাওয়ার বিষয়টি পরিবার আঁচ করতে পেরে তাকে বহুবার চট্টগ্রামে ফেরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পিয়াসা ফেরেনি। এমনকি মা-বাবার সঙ্গেও সম্পর্ক রাখেনি।
পিয়াসার পরিবার সূত্র জানায়, ছোটবেলা থেকেই পিয়াসা গান শেখা, ছবি আঁকা, নাচে বেশ আগ্রহী ছিল। খেলাঘর আসরসহ বিচরণ ছিল চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ‘মিস চট্টগ্রাম’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেকের নজরে এসে মন কাড়েন পিয়াসা। উত্তর বাড্ডায় নানার বাড়িতে যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর নজরে পড়েন পিয়াসা। ছয় মাসের মধ্যে একটি কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার কথা বলে পিয়াসা নানার বাসা ছেড়ে দেন। ওঠেন এক ব্যবসায়ীর দেওয়া ফ্ল্যাটে। এরপর থেকে বদলে যায় পিয়াসার জীবন। তিনি অসৎসঙ্গে পড়ে ডুবে যান মাদকের নেশায়। একের পর এক সঙ্গী বদল করে রাতারাতি পিয়াসা হয়ে ওঠেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক। পিয়াসার মা বলেন, পিয়াসা, মৌ কিংবা পরিমনিদেরকে সবকিছুর জন্য দোষারোপ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। কিন্তু তাদের যারা অসৎপথে নিয়ে গেছেন, তাদের অস্বাভাবিক পথে উত্থানের জন্য যারা দায়ী তাদেরকেও চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হোক। না-হয় এ ধরনের নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সুযোগ সন্ধানীরা নতুন নতুন পরীমনি কিংবা মৌ পিয়াসা সৃষ্টি করবে। যার মাশুল দিতে হবে তাদের পরিবারকে।
১ আগস্ট রাতে গুলশান থানার বারিধারার ৯ নম্বর রোড এলাকার ফ্ল্যাট থেকে পিয়াসাকে গ্রেফতার করে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসা। এই ঘটনায় গুলশান থানায় পিয়াসার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More