মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাতে এগিয়ে আসার আহ্বান

চুয়াডাঙ্গায় মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির জরুরিসভা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় চুয়াডাঙ্গা প্রবীণ হৈতিষী সংঘের কার্যালয়ে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ (অব.) হামিদুল হক মুন্সী।

মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. সেলিম উদ্দীন খান, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ও দৈনিক পশ্চিমাঞ্চলের সম্পাদক ও প্রকাশক আজাদ মালিতা, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সহসভাপতি সাংবাদিক শাহ আলম সনি, সহ-সম্পাদক হেমন্ত কুমার সিংহ রায়, প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক মেহেরাব্বিন সানভী, নির্বাহী সদস্য জাহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, মালেকা হক মাখন, আলাউদ্দীন ওমর, বজলুর রহমান, আব্দুস সালাম, আবু সাঈদ হেলাল নূর, একেএম আলী আখতার, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, গত কয়েকদিনে মাথাভাঙ্গা নদীতে যে দুর্ঘটনা আমরা দেখেছি, তা মারাত্মক কষ্টকর। এ ক্ষতি নদীর জন্য অপূরণীয়। আমরা এখনো কেন সচেতন হচ্ছি না। আমাদেও মনে রাখতে হবে, চুয়াডাঙ্গাকে বাঁচাতে হলে মাথাভাঙ্গাকে বাঁচাতে হবে। পদ্মার অন্যতম প্রধান শাখা নদী মাথাভাঙ্গার মোট দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার পড়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়। চিত্রা, কুমার, নবগঙ্গা এই নদীর শাখা নদী। এই নদীগুলো বাঁচাবার জন্য এদের মাতৃনদী মাথাভাঙ্গাকে বাঁচাতে হবে। সেই দায়িত্ব আমাদের চুয়াডাঙ্গাবাসীর।

আলোচনা সভায় উঠে আসে নদী দূষণ রোধে শহর ও গ্রামের পানি নিষ্কাশন নালা ও বর্জ্য ফেলা বন্ধ, নদীর তীরে অবৈধ আবাদসহ নদীর বুকে কোমর কারেন্ট জাল বাঁধ অপসারণ করার কথা।

আলোচনায় বক্তারা মাথাভাঙ্গা নদীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের অসচেতনতার কারণে মরা পশুপাখি মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে বাড়ছে নদী দূষণ। জেলা শহরের বেশ কয়েকটা ড্রেনের মাধ্যমে নোংরা পানি নদীতে দেদারছে নামছে। এমনকি কারো কারো বাসা বাড়ির মলমূত্রের লাইন সরাসরি ড্রেনের সাথে সংযোগ করা। মলসহ ড্রেন দিয়ে সেই পানিও নদীতে পড়ছে। এতে নদীর পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ছে। নদীর তীরে অবৈধভাবে পানবরজসহ বিভিন্ন প্রকার চাষাবাদ করা হচ্ছে। মাটি খননের কারণে তা ধুয়ে নদীতে নেমে নব্যতা নষ্ট করছে। অবাক হলেও সত্য যে, নদীর বুক থেকে বালু উত্তোলন করে উপকারের বদলে ক্ষতিই ডেকে আনা হচ্ছে। কিছু স্থানে রয়েছে কোমর। তীরে কারেন্ট জাল দিয়ে নদীর স্বাভাবিক স্রোতের প্রতিবন্ধকতায় শুধু সৃষ্টি করা হচ্ছে না, ক্ষতিকারক ওই জালের কারণে ছোট-বড় মাছের পোনা রেনুও মারা পড়ছে।

গভায় উঠে আসে, গত কয়েকদিনে নদীতে যে মরা মাছ ভাসছিলো, তার সাথে নদীর কিছু কিছু জায়গায় উপওে কালো তেল তেলে স্তর দেখা গেছে। এটি নদীর আসে পাসের জমিতে দেয়া কীটনাশক কিনা সেটি যাচাই করে দেখার কথা। এছাড়াও সভায় বক্তারা বলেন, যে কারণেই হোক এ ধরনের দুর্ঘটনা পেছনের কি কারণ, সেটির সঠিক যাচাই বাছাই করতে হবে।

সভায় পাট পচানোর কথা উঠলে কোনো কোনো বক্তা উদাহরণ দিয়ে বলেন, পাট পচাঁনোর কারণে পানিতে গন্ধ হয় ঠিকই। তবে মাছ মরতে পারে না। গ্রামগঞ্জের খাল-বিলে প্রচুর মাছ থাকে। পাট পচাঁনোর কারণে মাছ মরতে দেখা যায়নি। আর পাট অর্থকরি ফসল। এ অঞ্চলের বহু কৃষক পাট চাষ করেন। পাট পচানোর বিষয়টি গবেষণার পরই নদীতে পাট পঁচানো যাবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত যেন সরকার কৃষকদের কল্যাণে দেয়, সেজন্য প্রশাসনের সামনে বিষয়টি আনতে হবে।

সভায় সকলের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনের করণীয় বা দায়েরার মধ্যে থাকা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির সাথে সংলাপের আয়োজন করা হবে। স্থানীয় সমস্যার সাথে বড় সমস্যা যেগুলো জাতীয় পর্যায়ের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব সেগুলোকেও চিহ্নিত কওে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা হবে। মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাতে সমস্ত সমস্যা সমাধানের দাবিতে খুব শিগগিরই জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে। সভায় কমিটির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। যার যার অবস্থানে থেকে মাথাভাঙ্গাকে বাঁচাতে হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More