৫২৮৮ বিলাসবহুল গাড়ির ‘কোটিপতি মালিক’ গোয়েন্দা জালে

মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য গাড়ির মালিক হওয়া অনেকটা স্বপ্নের মতো। অথচ শত কোটি টাকার বিলাসবহুল বা দামি গাড়ির মালিক হয়েও এক শ্রেণির করদাতা বছরের পর বছর সরকারকে কোটি কোটি টাকার কর থেকে বঞ্চিত করে আসছেন।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য যাচাই করে পাঁচ হাজার ২৮৮টি বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান পেয়েছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল- সিআইসি। উচ্চমূল্যের গাড়ি ক্রয় করলেও তা গোপন করে আয়কর ফাইলে না দেখানো কিংবা রিটার্ন দাখিল না করা এমন দুই হাজার ৫৬৯টি সুনির্দিষ্ট বিলাসবহুল গাড়ির খোঁজ পেয়েছে সংস্থাটির গোয়েন্দা দল। এর বেশির ভাগই উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে নিবন্ধিত। অথচ গাড়ি ক্রয়ের অর্থের উৎস কিংবা করের তথ্য কোথাও দেখানো হয়নি।

এনবিআরের গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে খোঁজ পাওয়া পাঁচ হাজার ২৮৮টি দামি ও বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে দুই হাজার ৭১৯টি গাড়ি করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আয়কর রিটার্নে দেখিয়েছেন। এক হাজার ৩৩৯টি গাড়ি আয়কর রিটার্নে দেখানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের সার্কেল থেকে গাড়ি ও গাড়ির বিনিয়োগ না দেখানো এসব আয়কর নথি পুনরায় উন্মোচন করা হয়েছে। ৪০৯টি গাড়ির মালিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রিটার্নই দাখিল করেননি। ৪৪২টি গাড়ির মালিক গাড়ির মালিকানা হস্তান্তর করেছেন। তবে, তারা সঠিকভাবে গাড়ির বিনিয়োগ কর ফাইলে দেখিয়েছেন কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে
যেমন: গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, চট্টগ্রামের কর অঞ্চল-১ এর অধীনে বিআরটিএ’র নিবন্ধন পাওয়া ১৫২টি বিলাসবহুল গাড়ির খোঁজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়কর ফাইলে প্রদর্শন না করা ৭০টি গাড়ির মধ্যে ২১টি গাড়ি নিবন্ধন নিয়েছে একটি বহুজাতিক পেইন্ট বা রং কোম্পানি। এই গাড়িগুলো বিআরটিএ-তে নিবন্ধিত থাকলেও কোম্পানিটি আয়কর রিটার্নে তা দেখায়নি। ওই কর অঞ্চলের কয়েকটি সার্কেলের আরও ২৯টি গাড়ির সন্ধান মিলেছে, যারা তথ্য গোপন করেছেন। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রড ও স্টিল প্রস্তুতকারী কোম্পানি, সিমেন্ট কোম্পানি, পোশাক কারখানা ও ফাইন্যান্স কোম্পানি রয়েছে। বাকি ২০টি গাড়ির মালিক কয়েকজন ব্যক্তি করদাতা, যাদের বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। আর সাতটি বিলাসবহুল নিবন্ধিত গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি।

dhakapost
একটি বিলাসবহুল ল্যাম্বরগিনি গাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে শুল্ক ও করের কারণে এই গাড়ির দাম ৩০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে / ছবি- সংগৃহীত
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের এই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা উচ্চমূল্যের কিছু গাড়ির নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য বিআরটিএ’র ডাটাবেজ থেকে সংগ্রহ করে। এসব গাড়ির দাম কয়েক কোটি টাকা হলেও বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি রয়েছে। শুধুমাত্র কর ফাঁকি থেকেই প্রতি বছর কয়েক’শ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। শুধু কর ফাঁকি নয়, রয়েছে অর্থপাচারের প্রমাণও। বড় বড় কোম্পানি ও প্রভাবশালীরা এই গাড়িগুলো ব্যবহার করলেও সরকারের চোখ ফাঁকি দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে আর্থিক শাস্তির পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধেও অভিযুক্ত হতে পারেন তারা।

গোয়েন্দা চোখে ৫২৮৮টি গাড়ির বর্তমান চিত্র

এনবিআরের গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে খোঁজ পাওয়া পাঁচ হাজার ২৮৮টি দামি ও বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে দুই হাজার ৭১৯টি গাড়ি করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আয়কর রিটার্নে দেখিয়েছেন। এক হাজার ৩৩৯টি গাড়ি আয়কর রিটার্নে দেখানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের সার্কেল থেকে গাড়ি ও গাড়ির বিনিয়োগ না দেখানো এসব আয়কর নথি পুনরায় উন্মোচন করা হয়েছে। ৪০৯টি গাড়ির মালিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রিটার্নই দাখিল করেননি। ৪৪২টি গাড়ির মালিক গাড়ির মালিকানা হস্তান্তর করেছেন। তবে, তারা সঠিকভাবে গাড়ির বিনিয়োগ কর ফাইলে দেখিয়েছেন কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। ১৮৮টি গাড়ির মালিক রিটার্নে গাড়ি প্রদর্শন করলেও তাতে কোনো কর ফাঁকি হয়েছে কি না, তা পুনরায় তদন্ত করা হচ্ছে। আর ১৪৮টি গাড়ি চলতি করবর্ষে আয়কর রিটার্নে দেখানোর কথা। অর্থাৎ এসব গাড়ি ২০২৪-২৫ করবর্ষে কেনা ও নিবন্ধন হয়েছে। ফলে এসব গাড়ি কেনা ও গাড়ির বিনিয়োগ চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষের রিটার্নে দেখানোর কথা। সংশ্লিষ্ট সার্কেলকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৬৭ (১২) অনুযায়ী ৪৩টি গাড়ির আয় খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট করদাতার আয়কর নথি পুনরায় উন্মোচন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মডেল ও দেশের ওপর নির্ভর করে একটি ল্যাম্বরগিনি গাড়ির দাম ভারতে ৪.৫৭ কোটি রুপি থেকে শুরু করে ৮.৮৯ কোটি রুপি পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশে শুল্ক ও করের কারণে এই গাড়ির দাম অনেক বেশি হয় এবং একটি ল্যাম্বরগিনির দাম সাধারণত ৩০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে। এছাড়া, বিআরটিএ ডাটাবেজ থেকে চারটি ফেরারি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া গেছে। মডেল ও বছর ভেদে একটি ফেরারি গাড়ির মূল্য চার কোটি থেকে ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পাঁচটি টেসলা গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে, প্রতিটি টেসলা গাড়ির মূল্য মানভেদে ৩৯ থেকে ৪২ হাজার ডলার হতে পারে। এছাড়া ১২টি মাসেরাতি, ১২টি ক্যাডিলাক, ২৫টি রোলস রয়েস, ২৯টি বেন্টলি, ৭১টি জাগুয়ার, ৮১টি পোরশে, ২১৯টি রেঞ্জ রোভার, ৪৮৬টি অডি, ৫০৮টি ল্যান্ড ক্রুজার, ৬৯৫টি জিপ, ৭৭৪টি মার্সিডিজ বেঞ্চ, এক হাজার ২২৭টি বিএমডব্লিউ এবং তিন হাজার সিসির উপরে এক হাজার ৩৩৫টি টয়োটা গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া গেছে
আয়কর আইনের ৬৭ ধারার ১২ উপধারায় বলা হয়েছে, “যেইক্ষেত্রে কোনো কোম্পানি করদাতা সরাসরি বা ভাড়ায় এক বা একাধিক মোটর কার বা জিপ ক্রয় করে এবং কোনো মোটর কার বা জিপের মূল্য রিজার্ভ ও পুঞ্জিভূত মুনাফাসহ তার পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক হয়, সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত হওয়া অর্থের ৫০ শতাংশ ওই আয়বর্ষে করদাতার ‘অন্যান্য উৎস হতে আয়’ খাতের আয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবে।” অর্থাৎ করদাতাকে ওই আয়ের ওপর বাড়তি কর দিতে হবে।

dhakapost
বিআরটিএ ডাটাবেজ থেকে চারটি ফেরারি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া গেছে। মডেল ও বছর ভেদে একটি ফেরারি গাড়ি ৪ কোটি থেকে ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে / ছবি- সংগৃহীত
বিলাসবহুল গাড়িগুলোর ব্র্যান্ড

সিআইসি-এর অনুসন্ধানে বিলাসবহুল পাঁচ হাজার ২৮৮টি গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি বিলাসবহুল ল্যাম্বরগিনি গাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। মডেল ও দেশের ওপর নির্ভর করে একটি ল্যাম্বরগিনি গাড়ির দাম ভারতে ৪.৫৭ কোটি রুপি থেকে শুরু করে ৮.৮৯ কোটি রুপি পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশে শুল্ক ও করের কারণে এই গাড়ির দাম অনেক বেশি হয় এবং একটি ল্যাম্বরগিনির দাম সাধারণত ৩০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে। এছাড়া, বিআরটিএ ডাটাবেজ থেকে চারটি ফেরারি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া গেছে। মডেল ও বছর ভেদে একটি ফেরারি গাড়ির মূল্য চার কোটি থেকে ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পাঁচটি টেসলা গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে, প্রতিটি টেসলা গাড়ির মূল্য মানভেদে ৩৯ থেকে ৪২ হাজার ডলার হতে পারে। এছাড়া ১২টি মাসেরাতি, ১২টি ক্যাডিলাক, ২৫টি রোলস রয়েস, ২৯টি বেন্টলি, ৭১টি জাগুয়ার, ৮১টি পোরশে, ২১৯টি রেঞ্জ রোভার, ৪৮৬টি অডি, ৫০৮টি ল্যান্ড ক্রুজার, ৬৯৫টি জিপ, ৭৭৪টি মার্সিডিজ বেঞ্চ, এক হাজার ২২৭টি বিএমডব্লিউ এবং তিন হাজার সিসির উপরে এক হাজার ৩৩৫টি টয়োটা গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া গেছে।

৪১ কর অঞ্চলে যত বিলাসবহুল গাড়ি

বৃহৎ করদাতা ইউনিট, ঢাকা : বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেওয়া ৩০৯টি বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে আয়কর রিটার্নে দেখানো ১৬৩টি গাড়ি। ১২৩টি গাড়ির মালিক রিটার্নে গোপন করেছেন। ১৮টি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি। ২৩টি গাড়ির মালিকানা হস্তান্তর হলেও হদিস মিলছে না।

কর অঞ্চল-১, ঢাকা : মোট ২২৬টি বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে ১২২টি গাড়ি আয়কর রিটার্নে দেখানো হয়েছে। ৬৩টি গাড়ি রিটার্নে গোপন করা হয়েছে। বিলাসবহুল ১৮টি গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি। ১৮টির মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে। ২০২৫-২০২৬ করবর্ষে নতুন পাঁচটি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া গেছে।

কর অঞ্চল-২, ঢাকা : মোট ২২৮টি বিলাসবহুল গাড়ির খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দা দল। যার মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো গাড়ির সংখ্যা ১২৪টি। ৪৩টি গাড়ির মালিক রিটার্ন দিলেও তা গোপন করেছেন। ১৯টি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি। ১১টির মালিকানা হস্তান্তর হলেও হদিস মিলছে না। ২০২৫-২০২৬ করবর্ষে নতুন পাঁচটি গাড়ির নিবন্ধন হয়েছে এবং ১১টি কোম্পানির বিলাসবহুল গাড়ির খোঁজ পাওয়া গেছে, যারা কর ফাঁকি দিয়েছে।

কর অঞ্চল-৩, ঢাকা : মোট ২০৪টি গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০৯টি গাড়ি আয়কর রিটার্নে দেখানো হয়েছে। ৩৩টি গাড়ির মালিক রিটার্নে তথ্য গোপন করেছেন। ২০টি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি। আটটির মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে, ১৯টির আরও যাচাইয়ের প্রয়োজন। ২০২৫-২০২৬ করবর্ষে নতুন সাতটি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া গেছে। কর ফাঁকি দেওয়া আটটি কোম্পানির গাড়ির খোঁজ মিলেছে।

dhakapost
সিআইসি-এর অনুসন্ধানে ১২টি ক্যাডিলাক গাড়ির নিবন্ধনেরও তথ্য পাওয়া গেছে / ছবি- সংগৃহীত
কর অঞ্চল-৪, ঢাকা : মোট ১৭৩টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে ১২৬টি রিটার্ন ফাইলে দেখানো হয়েছে। ২৮টি গাড়ির মালিক রিটার্নে তথ্য গোপন করেছেন। আটটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি। সাতটির মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে। ২০২৫-২০২৬ করবর্ষে নতুন চারটি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য মিলেছে।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের এই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা উচ্চমূল্যের কিছু গাড়ির নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য বিআরটিএ’র ডাটাবেজ থেকে সংগ্রহ করে। এসব গাড়ির দাম কয়েক কোটি টাকা হলেও বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি রয়েছে। শুধুমাত্র কর ফাঁকি থেকেই প্রতি বছর কয়েক’শ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। শুধু কর ফাঁকি নয়, রয়েছে অর্থপাচারের প্রমাণও। বড় বড় কোম্পানি ও প্রভাবশালীরা এই গাড়িগুলো ব্যবহার করলেও সরকারের চোখ ফাঁকি দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে আর্থিক শাস্তির পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধেও অভিযুক্ত হতে পারেন তারা
এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
কর অঞ্চল-৫, ঢাকা : মোট ২৭৫টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো হয়েছে মাত্র ১৫৪টি। ৬৫টি গাড়ির মালিক রিটার্নে তথ্য গোপন করেছেন। ১২টি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি। ৩৩টির মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে। ২০২৫-২০২৬ করবর্ষে নতুন ১১টি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য মিলেছে।

কর অঞ্চল-৬, ঢাকা : মোট ২৯১টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো হয়েছে ১৫৩টি। ৭৩টি গাড়ির মালিক রিটার্নে তথ্য গোপন করেছেন। ৩৪টি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি। ১৯টির মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে। একটি বিলাসবহুল গাড়ি যাচাইয়ের আওতায় রয়েছে। ২০২৫-২০২৬ করবর্ষে নতুন ১১টি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য মিলেছে।

কর অঞ্চল-৭, ঢাকা : মোট ১৯৯টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো হয়েছে ১০৫টি। ৪৯টি গাড়ির মালিক রিটার্নে তথ্য গোপন করেছেন। ২৮টি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি। ১৩টির মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে। ২০২৫-২০২৬ করবর্ষে নতুন চারটি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য মিলেছে।

কর অঞ্চল-৮, ঢাকা : মোট ৩৭৫টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে ১৫৭টি রিটার্ন ফাইলে দেখানো হয়েছে। ৭০টি রিটার্নে তথ্য গোপন, ৪১টি গাড়ির রিটার্ন দাখিল হয়নি, ৮৯টি বিলাসবহুল গাড়ি পুনরায় যাচাইয়ের আওতায়, ১৪টি নতুন গাড়ির নিবন্ধন এবং চারটি কোম্পানির গাড়ি কর ফাঁকি সংক্রান্ত।

কর অঞ্চল-১০, ঢাকা : ১৩৬টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো ৮৭টি। ৩১টি গাড়ির তথ্য রিটার্নে গোপন, নয়টি গাড়ির রিটার্ন নেই, ছয়টির মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে এবং নতুন তিনটি গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া গেছে।

কর অঞ্চল-১১, ঢাকা : মোট ১৬২টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো হয়েছে মাত্র ৪৬টি। ৬১টি রিটার্নে অপ্রদর্শিত, ২৬টি গাড়ির মালিক রিটার্ন দেন না, ২১টির মালিকানা হস্তান্তর, পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি পুনরায় যাচাইয়ের আওতায় এবং নতুন তিনটি গাড়ির নিবন্ধন।

dhakapost
পাঁচটি টেসলা গাড়ির নিবন্ধন হয়েছে। প্রতিটি টেসলা গাড়ির মূল্য মানভেদে ৩৯ থেকে ৪২ হাজার ডলার হতে পারে / ছবি- সংগৃহীত
কর অঞ্চল-১২, ঢাকা : ২১৩টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো হয়েছে মাত্র ১৩৩টি। ৪৮টি গাড়ি রিটার্নে অপ্রদর্শিত, ২২টি গাড়ির মালিক রিটার্ন দেন না, পাঁচটির মালিকানা হস্তান্তর এবং নতুন পাঁচটি গাড়ির নিবন্ধন।

কর অঞ্চল-১৩, ঢাকা : ১২৬টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো মাত্র ৬৮টি। ৩০টি রিটার্নে অপ্রদর্শিত, ১২টি গাড়ির মালিক রিটার্ন দেন না, আটটির মালিকানা হস্তান্তর এবং নতুন আটটি গাড়ির নিবন্ধন।

কর অঞ্চল-১৪, ঢাকা : ১৬০টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো মাত্র ৮৫টি। ৪৫টি রিটার্নে অপ্রদর্শিত, ২১টি গাড়ির মালিক রিটার্ন দেন না, চারটির মালিকানা হস্তান্তর এবং নতুন পাঁচটি গাড়ির নিবন্ধন।

কর অঞ্চল-১৫, ঢাকা : ১৪৬টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো মাত্র ৮৪টি। ১৯টি রিটার্নে অপ্রদর্শিত, ১০টি গাড়ির মালিক রিটার্ন দেন না, ১২টির মালিকানা হস্তান্তর, তিনটি গাড়ি পুনরায় যাচাইয়ের আওতায়, নতুন নয়টি গাড়ির নিবন্ধন এবং নয়টি কোম্পানির গাড়ি কর ফাঁকি সংক্রান্ত।

কর অঞ্চল-১৬, ঢাকা : ১২০টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো মাত্র ৬৬টি। ১৯টি রিটার্নে অপ্রদর্শিত, ১০টি গাড়ির মালিক রিটার্ন দেন না, ১২টির মালিকানা হস্তান্তর, তিনটি গাড়ি পুনরায় যাচাইয়ের আওতায়, নতুন নয়টি গাড়ির নিবন্ধন এবং নয়টি কোম্পানির গাড়ি কর ফাঁকি সংক্রান্ত।

কর অঞ্চল-১৭, ঢাকা : ৭৮টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রিটার্ন ফাইলে দেখানো ৪৬টি। ২১টি গাড়ি রিটার্নে অপ্রদর্শিত, সাতটি গাড়ির মালিক রিটার্ন দেন না, নতুন দুটি গাড়ির নিবন্ধন এবং দুটি কোম্পানির গাড়ি কর ফাঁকি সংক্রান্ত।

কর অঞ্চল-১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫, ঢাকা : এই অঞ্চলগুলোর আওতায় যথাক্রমে ৬২, ১০২, ৮৩, ৮৯, ১২৩, ১৬৫, ৪৭ ও ১২৭টিসহ মোট ৭৯৮টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে মাত্র ৩৩০টি রিটার্ন ফাইলে দেখানো হয়েছে। ২০৬টি গাড়ি রিটার্নে অপ্রদর্শিত এবং ৫৩টি গাড়ির মালিক রিটার্ন দেন না। বাকি গাড়িগুলোতে মালিকানা হস্তান্তর, পুনরায় যাচাই ও কর ফাঁকিসহ অন্যান্য সমস্যা পেয়েছে গোয়েন্দা দল।

অন্যান্য কর অঞ্চল : চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর কর অঞ্চলগুলোর আওতায় মোট এক হাজার ২৬টি বিলাসবহুল গাড়ির খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দা দল। এর মধ্যে মাত্র ৫৪০টি গাড়ি রিটার্ন ফাইলে দেখানো হয়েছে। ২৮৭টি গাড়ির তথ্য গোপন করা হয়েছে এবং ৬৩টি গাড়ির মালিক রিটার্নই দাখিল করেননি। বাকিগুলোতে মালিকানা হস্তান্তর, পুনরায় যাচাই ও কর ফাঁকিসহ অন্যান্য সমস্যা পাওয়া গেছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More