স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার গাংনী ইউনিয়নে ত্রাণের চাল দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড সদস্য নাজমিন নাহার নেহিমার বিরুদ্ধে। এছাড়াও এর আগে মাতৃত্বকালীন ভাতা ও বয়স্ক ভাতা কার্ড করে দেয়ার কথা বলেও হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার হাজার টাকা। টাকা নিয়েও এখনও পর্যন্ত কারোরই কোনো কার্ড করে দেয়া বা ত্রাণের ব্যবস্থা করেননি তিনি। ফলে ওয়ার্ড সদস্য নেহিমার বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় ও দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। ত্রাণ বিতরণের সূত্র ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা গাংনী ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য নাজমিন নাহার নেহিমা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মোচাইনগর গ্রাম থেকে ত্রাণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু’শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০-৩০ টাকা করে চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছে।
ভুক্তভোগী মোচাইনগর গ্রামের মাঠপাড়ার নাসির উদ্দিন বলেন, বাড়িতে এসে নেহিমা মেম্বার সরকারি চাল দেয়ার কথা বলে আমাদের ভোটার আইডি কার্ড ও ২০ টাকা করে নিয়েছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় হয়ে গেলে নেহিমা খাতুনকে আমি চালের কথা বললে তিনি বলেন, এবার চাল দেয়া সম্ভব হয়নি, সামনের দিনে চেষ্টা করবো।
এদিকে গ্রামের ঝোড়পাড়ার কালু হোসেনের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, নেহিমা খাতুন সরকারি চাল দেয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড ও ৩০ টাকা করে নিয়েছে। এক মাস হয়ে গেলেও আমি কোনো চাল পাইনি। পরে নেহিমা খাতুনকে চালের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে অল্প কিছু কার্ড দিয়েছিলো। সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। সামনের দিনে কার্ড আসলে তোমাদেরকে দেয়া হবে। আর বেশি কথা বললে কখনোই চাল পাবে না।
মৃৃত শহীদের স্ত্রী জিন্নাত আরা খাতুন বলেন, নেহিমা মেম্বার আমাদের বাড়িতে এসে আমার ভোটার আইডি কার্ড ও ২০ টাকা করে নিয়েছে বলেছে সরকারি চাল দিবে এক মাসের বেশি হয়ে গেলেও আমাদেরকে এখনো কোনো চাল দেয়নি।
একই গ্রামের মাঝেরপাড়ার শুকুর আলীর ছেলে শিপন হোসেন বলেন, আমার স্ত্রী গর্ভবতী থাকাকালীন আড়াই বছর আগে আমাদের বাড়িতে এসে আমার স্ত্রীকে মাতৃকালীন ভাতা কার্ড করে দিবে বলে আমার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে। কিছুদিন পরে কার্ডের বিষয় আমি জিজ্ঞাসা করলে আমাকে বলে এ বছরে কার্ড শেষ হয়ে গেছে। সামনে বছরে করে দেয়া হবে। পরের বছরে আমি আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলে নেহিমা মেম্বার বলে কার্ড করা সম্ভব হয়নি। সামনে বছর দেখা যাবে। পরে আমি যখন টাকা ফেরত চাই আমাকে বলে টাকা ফেরত দিতে পারবো না।
ঝোড়পাড়ার মৃত জুব্বার ম-লের ছেলে দো-ু হোসেন বলেন, নেহিমা মেম্বার আমাদের বাড়িতে এসে আমার বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাড়ে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে। দুই মাস পরে আমি নেহিমাকে জিজ্ঞাসা করলে নেহিমা বলে সামনের দিন দেখা যাবে। আর এ বিষয়ে অন্য কাউকে বললে কোনদিন আমার কার্ড হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশকয়েকজন গ্রামবাসী জানিয়েছে, গাংনী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য নাজমিন নাহার নেহিমা আমাদের মোচাইনগর গ্রাম থেকে বেশ কয়েকজন কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে। পার্শ্ববর্তী শালিকা ও নান্দবার গ্রাম থেকেও ভাতার কার্ড করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে গাংনী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য নাজমিন নাহার নেহিমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।