ইসিজি ফ্রি করানোর অনুরোধে ক্ষিপ্ত হলেন চিকিৎসক

স্টাফ রিপোর্টার: চিকিৎসা না দিয়েই জরুরি বিভাগ থেকে বৃদ্ধ রোগীকে বের করে দিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আনিকা বুশরা হাসান। দীর্ঘ দেড়ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসা মেলেনি বৃদ্ধের। অবশেষে অপর এক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল আবেদীন।
অভিযোগসূত্রে প্রকাশ ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি রিপোর্টের নির্ধারিত ৮০ টাকা মওকুফের জন্য জরুরি বিভাগের ডা. আনিকা বুশরা হাসানের কাছে কাকুতি-মিনতি করার অপরাধেই মেলেনি জয়নালের চিকিৎসা সেবা। কয়েকবার বৃদ্ধের অনুরোধের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে তার কোনো চিকিৎসা দেবেন না বলে জানিয়ে দেন ডা. আনিকা বুশরা। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তথা হারদী হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় শুধু জয়নাল আবেদীনই নন, অভিযোগ উঠেছে আরও বেশ কয়েকজন রোগীরও চিকিৎসা দেননি ওই ডাক্তার। এদিকে এ ঘটনার পর চিকিৎসা না পেয়ে রোগী ও তার স্বজনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের অনেকেই চিকিৎসকের প্রতি নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, ডাক্তারি পেশা একটি সেবামূলক পেশা। এ পেশায় নিয়োজিতরা সব শ্রেণিপেশার মানুষের সেবা করে থাকেন। তাদের মতো মানুষের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কখনোই সাধারণ মানুষ আশা করে না।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের ভোলাডাঙ্গা গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মৃত হোসেন আলীর ছেলে বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি কয়েকদিন ধরে ঠা-া ও বুকের সমস্যায় ভূগছি। রোববার বেলা ১২টার দিকে আমার স্ত্রীসহ চারজন আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যায়। ইমার্জেন্সিতে গেলে ডাক্তার একটি ইজিসি করাতে বলেন। ইসিজি করা বাবদ আমার নিকট থেকে ৮০ টাকা চাওয়া হয়। শুনেছি সরকারি হাসপাতালে সবকিছু ফ্রি দেয়। আমি গরিব মানুষ, আমার ইসিজি ফ্রি করে দেয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করি।
হাসপাতালের লোকজন বলে, ফ্রি করতে হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অথবা আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) কাছ থেকে লিখে আনতে হবে। তাদের কথা শুনে আমি ৮০ টাকা মাফ করানোর জন্য আবার ইমার্জেন্সিতে গিয়ে ডাক্তারকে অনুরোধ করি। ফ্রি হবে না বলে জানিয়ে দেন ডাক্তার। সরকারি হাসপাতালে নাকি সবকিছু ফ্রি হয় একথা বলায় তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে অবশ্যই ইসিজির টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরে ইসিজির টাকা পরিশোধ করে রিপোর্ট দেখাতে আসি জরুরি বিভাগে। এ সময় ডা. আনিকা বুশরা আমার রিপোর্ট দেখবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এমনকি আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন তিনি। চিকিৎসা না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ডা. আনিকা বুশরা জানায়, আমার কাছে ইজিসি ফ্রি করার কথা কেন বললেন? আপনাকে চিকিৎসা দেবো না।
তিনি বলেন, প্রায় ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাও চিকিৎসা দেয়নি। পরে আমাকে চলে যেতে বলায় আমি এই হাসপাতালে আউটডোর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিই।
জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, আসলে আমি বুঝতে পারিনি আরএমও এবং উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কক্ষ কোনটা। না বোঝার কারণেই আমি জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের নিকটে বলেছি। এই ভুলের জন্য আমাকে চিকিৎসা দিলো না।
বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী ইসমাত আরা বলেন, আমার স্বামী না জেনে বুঝে ওই নারী চিকিৎসকের নিকট বলে ফেলেছে ইজিসির ফ্রির বিষয়ে। এজন্য তিনি রেগে গিয়ে আর দেখেননি। অনেক অনুরোধের পরও আমার স্বামীকে চিকিৎসা দেয়নি।
স্থানীয় দোকানদার তৌফিক হোসেন বলেন, রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রোগী নিয়ে জরুরি বিভাগে গিয়েছিলাম। তিনি আমার রোগীকেও দেখেননি। এর আগে জয়নাল আবেদীন নামে এক বৃদ্ধের সাথে ইসিজি ফ্রি করার কথা বলায় রাগান্বিত হয়ে চিকিৎসা না দিয়েই চলে যেতে বলেন ডা. আনিকা বুশরা। পরে ওই বৃদ্ধ চলে যান। এরপর আর কোনো রোগী না দেখে তিনি চুপচাপ বসে থাকেন। আমিসহ জরুরি বিভাগের সামনে ২০-২৫ জন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তিনি আর কাউকেই চিকিৎসা দেবেন না বলে জানালে আমরা বাধ্য হয়ে অন্য চিকিৎসকের কাছে যায়। তৌফিক হোসেন আরও বলেন, শুধু এ দিনই নয়, প্রায় দিনই তিনি রোগীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। মন চাইলে রোগী দেখেন। না চাইলে চুপচাপ বসে থাকেন। এর আগে বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে ডা. হাদি জিয়া উদ্দিন আহমেদকে জানিয়েও কোন প্রতিকার হয়নি।
এদিকে, স্থানীয় ও ভুক্তভোগী রোগীরা জানিয়েছে, ডা. আনিকা বুশরা হাসানের এমন আচরণ নতুন নয়। তিনি ডিউটির সময় বই পড়েন। পড়ার সময় সামনে কোনো রোগী থাকলেও কেয়ার করেন না। খারাপ আচরণ করেন। ভুক্তভোগীরা বেশ কয়েকবার আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদি জিয়া উদ্দিন আহমেদকে জানালেও কোনো প্রতিকার হয়নি।
ডা. আনিকা বুশরা হাসানের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা না বলতে পারবেন না জানিয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদি জিয়া উদ্দিন আহমেদ দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ঘটনাটি যা ঘটেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ওই চিকিৎসককে ডেকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলে মেনেজ করবো। যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকা- না ঘটায়। এরপরও যদি তিনি এমন কর্মকা- করেন তখন সংবাদ প্রতিবেদন করার জন্য বলেন এই কর্মকর্তা। এখন এ বিষটি নিয়ে কোন কিছু না করারও অনুরোধ করেন ডা. হাদি জিয়া উদ্দিন আহমেদ।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। একজন চিকিৎসক ডিউটি চলাকালীন সময় কোন রোগীকেই চিকিৎসা দেবেন না এটা কখনো বলতে পারবেন না। এমনকি ডিউটির সময় পার হলেও কোন রোগী থাকলে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে বলে নির্দেশ দেয়া আছে। তিনি আরও বলেন, আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More