স্টাফ রিপোর্টার:চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। উত্তরের হিমেল বাতাস আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে গোটা জেলা। দিনের আলোও ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না। ফলে খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতেও লোকজন ও যানবাহনের চলাচল তুলনামূলকভাবে কম দেখা যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, হঠাৎ করেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস বইছে, যা শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আজ ২৫ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা আরও কমে দাঁড়ায় ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর্দ্রতা ছিল একই, ৯৫ শতাংশ। চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নেমে আসে এবং জেলার ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে,
চুয়াডাঙ্গায় সকাল থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। উত্তরের শীতল বাতাসে মানুষের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণ।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজের সন্ধানে বের হতে না পারায় অনেকেই চরম কষ্টে দিন পার করছেন। চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর এলাকার দিনমজুর এরশাদ আলী বলেন,
“তীব্র শীতে কাজে বের হতে পারছি না। বাইরে গেলেই শরীর কাঁপতে শুরু করে।”
আরেক দিনমজুর রহমান মিয়া জানান,
“শীতের তীব্রতা এত বেশি যে ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর অবশ হয়ে যায়। তবুও পেটের তাগিদে কাজে বের হতে হচ্ছে।”
ভ্যানচালক রতন মিয়া বলেন,
“শীতের কারণে যাত্রী কমে গেছে। রাস্তায় বের হলেই প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাঁপুনি ধরে যায়।”
তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্যখাতেও। চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশু রোগীর সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান,
“প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জন শিশু ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি আসছে।”
শীতের কারণে দিনমজুরদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিকরা জানান, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার কথা থাকলেও তীব্র ঠান্ডা ও হিমেল বাতাসের কারণে দীর্ঘ সময় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় কাজ বন্ধ রেখে আগুন পোহাতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গায় দিন দিন শীতের প্রকোপ আরও বাড়ছে। ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল বাতাসে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও অসহায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো।
তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মানবিক সংগঠন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.