প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৩জন আটক : পুলিশে সোপর্দ

শরিফুল ইসলাম রোকন: মানুষকে লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করাই তাদের পেশা। প্রতারক চক্রের সদস্যদের টার্গেট বিশেষ করে মধ্যবয়সী নারী। তারা মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে নগদ টাকা, সোনার গয়না নিয়ে পালিয়ে যায়। এমনই এক প্রতারক চক্রের সদস্যকে আটক করেছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। আটক প্রতারক চক্রের সদস্য রানা (৩১) নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপপুর উপজেলার চানপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। পলাতক তার সহযোগী একই গ্রামের রনি ও শাকিল।
জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় ১ মাস পূর্বে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সামনে। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বটিয়াপাড়া গ্রামের কামিনী খাতুন তার মেয়েকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যান। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য বলেন। কামিনী তার মেয়েকে হাসপাতালে রেখে বাইরে দোকানে আসেন। এসময় প্রতারক চক্রের এক সদস্য কামিনীর সাথে আলাপচারিতা করেন। মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে স্বর্ণের চেন, লকেট ও কানের দুল এবং নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে সটকে পড়ে প্রতারক চক্র। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে কামিনী তার বোনের সাথে আলমডাঙ্গা শহরে আসেন। এসময় দেখতে পান ওই প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে। তাদের দুজনকে ধাওয়া করে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
প্রতারিত কামিনী জানান, আমার মেয়েকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডাক্তারের নিকট দেখানোর পর কয়েকটি পরীক্ষা করতে বলেন। এসময় প্রতারক চক্রের সদস্যরা আমার নিকট এসে আলাপ করতে থাকে। ওই সময় বিভিন্ন কৌশলে আমার নিকট থেকে গলার চেন ও লকেট এবং কানের দুল খুলে নেয়। এরপর তারা আমার ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকাও নিয়ে নেয়। এরপর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে জানতে পারি আমার টাকা ও গয়না প্রতারকেরা নিয়ে গেছে।
প্রতারক চক্রের সদস্য রানা জানান, তারা চারজন এ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করেন। পরে তাদেরকে বিভিন্ন দামী জিনিসের লোভ দেখিয়ে নগদ টাকা, সোনার গয়না নিয়ে সটকে পড়ে। তারা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সামনে থেকে কামিনীকে টার্গেট করে তার সাথে এক প্রতারকের পরিচয় হয়। তাকে বলে খালা আমার কাছে প্রায় দেড় লাখ টাকার মেডিসিন আছে। আমি বিক্রি করতে গেলে পুলিশে ধরতে পারে। আরেক সদস্য বলে আপনি সহযোগিতা করলে আপনাকে টাকা দেবো। পরে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কামিনীকে নিয়ে যায় আরেক প্রতারকের কাছে। তিনি ওই জিনিসের দাম বলে দেড় লাখ টাকা। সেখান থেকে একটু আড়ালে গিয়ে প্রতারক কামিনীকে বলে আমরা ওকে ৭০ হাজার টাকা দাম বলবো। আর বাকী টাকা আমরা দুজন ভাগ করে নেবো। তাহলে আপনি বিক্রি করে নিয়ে আসেন। তবে এত টাকার জিনিস নিয়ে যাবেন, আপনাকে তো আমরা চিনি না। আপনি আপনার চেন, কানের দুল ও কিছু টাকা আমার কাছে রেখে যান। কামিনী টাকার লোভে চেন, কানের দুল ও নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ওই জিনিসটা বিক্রি করতে যান। প্রতারক চক্রের সদস্যরা চেন, কানের দুল ও টাকা নিয়ে সটকে পড়ে। পরে দেখতে পান ওই প্যাকেটে এক কেজি সুজি আছে। তারা আলমডাঙ্গা শহরে প্রতারণা করার জন্য রাতে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর রেলগেটের পাশে হোটেল আল-হায়াত আবাসিকে ওঠে। সেখান থেকে সকালে আলমডাঙ্গা শহরে আসে। এরই মধ্যে কামিনী চিনে ফেলায় দুজন পালিয়ে যায় আর আমাকে আটক করে। তিনি আরও জানান, যখন সামনে যা পায় সেটা দিয়েই প্রতারণা করি। এমনকি ইটও দিই। দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ হোটেলে অভিযান চালিয়ে প্রতারকচক্রের বাকী দুই সদস্য রনি ও শাকিলকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, প্রতারিত নারী ও তার বোন স্থানীয়দের সহায়তায় এক প্রতারক চক্রের সদস্যকে আটক করে থানায় সংবাদ দেয়। পরে পুলিশ ওই প্রতারক চক্রের সদস্যকে থানায় করে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থল চুয়াডাঙ্গা সদর থানায়। সেকারণে প্রতারক চক্রের সদস্যকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ নিয়ে গেছে এবং প্রতারক চক্রের বাকী দুই সদস্যকে কুষ্টিয়া সদর থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More