অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকার ছোট বাজেট দিচ্ছে আজ

স্টাফ রিপোর্টার: উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগে আস্থাহীনতার মধ্য দিয়ে চলছে দেশের সার্বিক অর্থনীতি। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণেই মূলত আস্থাহীনতায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি রাজস্ব আহরণে নাজুক অবস্থা হলেও আইএমএফ-এর শর্তের চাপ থেকে বের হতে পারছে না এনবিআর। এমন বৈরী পরিবেশে আজ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেটের সম্ভাব্য আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতির পরিমাণ (অনুদানসহ) ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় সংসদ না থাকায় বেলা ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্য পেশ করবেন। অন্তর্বর্তী সরকার এ বাজেট প্রণয়নে আট বিষয়কে মূল কৌশল হিসাবে ধরেছে। সেগুলো হচ্ছে-কর জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি, দেশি শিল্পবিকাশে সহায়তা, কাক্সিক্ষত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, কমপ্লাইন গ্যাপ হ্রাস ও ভ্যাটের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি সহজীকরণ। কর অব্যাহতি সংস্কৃতি কমিয়ে আনার ব্যাপারে অর্থ উপদেষ্টা বিস্তারিত তুলে ধরবেন বাজেট বক্তব্যে। সেখানে থাকতে পারে বিদ্যমান কর কাঠামোকে যৌক্তিক করতে এবং কর অব্যাহতি লাগাম টানার লক্ষ্যে সম্প্রতি কর ব্যয় নীতিমালা ও এর ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রণয়ন করার বিষয়টি। পাশাপাশি যৌক্তিকভাবে ও পর্যায়ক্রমে সংকোচন নীতি গ্রহণ করার বিষয়ে থাকবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। এছাড়া অবারিত সময়ের জন্য কর অব্যাহতি নিরুৎসহিত করার বিষয়টিও তুলে ধরবেন। তবে প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদে অনুমোদন সাপেক্ষে কর অব্যাহতি দেয়ার কথাও বলতে পারেন তিনি। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবার ব্যয় সংকোচনের পথ দেখাবেন অর্থ উপদেষ্টা। এজন্য বাজেটের আকার আগামীতে বাড়বে না, উলটো কমবে। ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার চেষ্টা করা হয়েছে। গত এপ্রিলে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমেছে। যদিও আগামী জুনে মূল্যস্ফীতির অঙ্ক ৮ শতাংশের ঘরে নেমে আসার প্রত্যাশা ছিল অর্থ উপদেষ্টার, সেটা অনেকটা ক্ষীণ হয়ে গেছে। সেখান থেকে সরে আগামী জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ৭ শতাংশের ঘরে নেমে আসবে-এমন প্রত্যাশা কাছে ব্যক্ত করেছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। যদিও নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি সেখানে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। তবে মূল্যস্ফীতির কারণে গরিব মানুষকে সহায়তা দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার ও ভাতার অঙ্ক-দুটিই বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কয়েকটি ধাপ কমিয়ে এর কাঠামো ছোট করা হবে।
এদিকে সংকটময় পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমে আসবে-এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের গতি থমকে গেছে। যে কারণে প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী ধারা শুরু হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সেটি অর্জন নিয়েও সংশয় রয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমি বলব-যেটা বাস্তবায়ন করতে পারব, সে আলোকে আগামী অর্থবছরে বাজেটে আকার এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো থাকবে। আমরা এ কাজ করব, সেই করব-এসব বলে বাজেটে বড় কোনো লিস্ট (তালিকা) দেব না। তালিকা হবে সীমিত পরিসরে। বাজেটে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে প্রাইভেট সেক্টরের (বেসরকারি খাত) উন্নয়ন কীভাবে আনা যায়, সেখানেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে স্বাস্থ্য, সেবা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ের ওপর জোর দেয়া। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি অনেকটা নাজুক অবস্থায় পড়েছে। এমন বৈরী পরিবেশে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এজন্য অর্থ উপদেষ্টা আগামী অর্থবছরে ভ্যাট ও কর অনেকটা বাড়াতে যাচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় আরও বাড়বে। এছাড়া শিল্প খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনাসহ বেশি কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে জানান, ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আকারে অনেক বড়-এটি বাস্তবায়নযোগ্য হবে বলে মনে হয় না। ২ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি এবং সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব। এর মধ্যে ঘাটতি অর্জন সম্ভব হলেও রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে না। কারণ, আমরা ৪ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে পেরেছি মনে পড়ে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ বছর চার লাখ কোটি টাকা অর্জন খুবই দুরূহ। সেখান থেকে আগামী অর্থবছরে আরও দেড় লাখ কোটি টাকা বেশি আদায়, এমন কোনো দৃশ্য নেই যে এ বড় অঙ্ক টাকা আদায় সম্ভব। কিন্তু সেটি আদায় করতে গেলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের এ বাজেটে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী সময়কালের চ্যালেঞ্জ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও ঋণ প্রাপ্যতার সংকোচনের বিষয়টি তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে চলে আসা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা, সাম্প্রতিক ট্রাম্প প্রশাসনে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে পালটা শুল্ক আরোপ, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্মূল্যায়নের প্রেক্ষাপটও উঠে আসবে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যে। তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বড় কোনো মেগা প্রকল্প থাকবে না। বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নতুন বাজেটে জিডিপির ৩০.২৫ শতাংশ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহে বিঘœ, উচ্চ সুদহার ও ডলার সংকটে এ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও শঙ্কা থাকবে। নতুন অর্থবছরে জিডিপির ৪ শতাংশ রেখে ঘাটতি বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সম্ভাব্য অঙ্ক ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি অর্থায়নে জোর দেওয়া হয়েছে ব্যাংক খাতকে। এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেবে সরকার। তবে বৈদেশিক ঋণের অঙ্কও বাড়বে। এদিকে আইএমএফ-এর চাপ থাকার পরও ভর্তুকি অঙ্ক বাড়ানো হচ্ছে। কৃষি খাতে ভর্তুকি কমবে না। সব মিলে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বেশি ভর্তুকি ও প্রণোদনায় বরাদ্দ থাকবে। এছাড়া আসছে বাজেটে দেশীয় টেক্সটাইল মিলে সুতা উৎপাদনে ভ্যাটহার বাড়ানো হচ্ছে। এতে চাপে পড়বে গ্যাস সংকটে ধুঁকতে থাকা টেক্সটাইল মিলগুলো। প্রতি কেজি কটন সুতা ও ম্যান মেইড ফাইবার সুতার সুনির্দিষ্ট কর (ভ্যাট) ৩ থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হচ্ছে। বাড়বে করপোরেট কর : বাজেটে করপোরেট কর বাড়তে পারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে করপোরেট কর সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হতে পারে। ব্যাংকসহ আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থায় লেনদেনের শর্তে করপোরেট কর ২৫ শতাংশই থাকবে। তবে সে শর্ত পূরণ কঠিন হতে পারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করপোরেট কর অব্যাহত থাকছে। পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাবও করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা। এছাড়া সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ওপর করহার কমানো হতে পারে। জমি কেনাবেচায় করছাড় : বর্তমানে জমি কেনায় করহার বেশি। এই করহার কমানোর প্রস্তাব করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা, যাতে কালোটাকা তৈরি না হয়। এখন কর ফাঁকি দিতে অনেকেই জমির মূল্য কম দেখান। এতে কালোটাকা তৈরি হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, জমি কেনাবেচার ওপর কর এলাকাভেদে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে, যা এখন ৮, ৬ ও ৪ শতাংশ।
ফ্ল্যাট ও জমি কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে যে করহার আছে, তা এলাকাভেদে কয়েক গুণ বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। এমনকি অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগও রাখা হতে পারে। বাজেট বক্তৃতায় পাচার অর্থ ও সম্পদের ওপর কর ও জরিমানা আরোপ করার ঘোষণা দিতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা। জানা গেছে, জন্মসূত্রে বাংলাদেশি ছিলেন, কিন্তু পরে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন, এমন ব্যক্তিরা যদি বাংলাদেশে অর্জিত আয়ের ওপর যথাযথভাবে কর না দেন এবং নানা উপায়ে বিদেশে পাচার করেন, তাহলে ওই অর্থের ওপর কর ও জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।
অন্যদিকে শিল্পের লাভ-লোকসান যাই হোক-বাজেটে দ্বিগুণ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে। অবশ্য টার্নওভারের সীমা এক কোটি বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করা হচ্ছে। এ পদক্ষেপের ফলে শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্যবসা পরিচালনার জন্য রাজধানীর প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে স্থাপনা ভাড়া নিতে হয়। এ ভাড়ার উৎসে কর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে।
এছাড়া শিল্পের কর অবকাশ সুবিধাও বাতিল করা হচ্ছে। বর্তমানে ৩১টি শিল্প খাত ১০ বছরের জন্য অঞ্চলভেদে ক্রমহ্রাসমান হারে কর অবকাশ সুবিধা ভোগ করছে। ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক খাতেও করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। অব্যাহতির সংস্কৃতি পরিহার করতে রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, পলিপ্রোপাইন স্টাপল ফাইবারের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ফোন উৎপাদনে হ্রাসকৃত ভ্যাট হার বাড়ানো হচ্ছে। এতে ইলেকট্রনিক্স শিল্পের সুরক্ষা কমবে, বিদেশি ইলেকট্রনিক্স-সামগ্রী আমদানি বাড়বে। পাশাপাশি ক্রেতার খরচ বাড়বে। গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত সিমেন্ট শিট উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। স্টিলশিল্পের কাঁচামাল ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকা ম্যাঙ্গানিজ অ্যালয় উৎপাদনে টনপ্রতি এক হাজার টাকা ভ্যাট আছে, এটি ১ হাজার ২০০ টাকা করা হচ্ছে। ফেরো সিলিকন অ্যালয়ের ভ্যাট দেড় হাজার টাকা করা হচ্ছে। অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করে ভ্যাটহার বাড়ানো হচ্ছে হোম অ্যাপ্লায়েন্স বা গৃহস্থালিসামগ্রী উৎপাদনে। ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, ইলেকট্রিক কেতলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার ও প্রেসার কুকার উৎপাদনে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫ শতাংশ, ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৭ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। লিফটের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করে উৎপাদনের জন্য উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে বছরভিত্তিক ভ্যাটহার বাড়ানো হচ্ছে।
এবারের বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়াবে। হোম অ্যাপ্লায়েন্স, রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশন শিল্পের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করায় বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে জনগণের ওপর। অনলাইনে পণ্য বিক্রির দিকেও বাজেটে নজর দেওয়া হয়েছে। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালিসামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেটসামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট সাড়ে ৭ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমান অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, বাজেটে এটি ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে বিধায় অনলাইনে পণ্য কেনায় ভোক্তাদের বাড়তি অর্থ গুনতে হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করসীমা বাড়ছে না। তবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে।
আগামী বাজেটে সরবরাহ পর্যায়ে আইসক্রিমের সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে বাজারে আইসক্রিমের দাম কমতে পারে। বাস-মাইক্রোবাস-যানজট কমাতে ১৬ থেকে ৪০ আসনবিশিষ্ট বাস আমদানিতে শুল্ক কমতে পারে। বর্তমানে এ ধরনের যানবাহন আমদানিতে ১০ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক আছে। এটি কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া মাইক্রোবাসের সম্পূর শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বাস-মাইক্রোবাসের দাম কমতে পারে। লবণ-আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদনের ব্যবহৃত পটাশিয়াম আয়োডেট দাম বাড়ায় বাজারে লবণের দাম বাড়ছে। তাই আগামী বাজেটে পটাশিয়াম আয়োডেটের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে বাজারে লবণের দাম কমতে পারে। চিনি-পরিশোধিত চিনি আমদানিতে সুনির্দিষ্ট শুল্ক টনপ্রতি সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে চার হাজার টাকা করা হচ্ছে। এতে চিনির দাম কমতে পারে।
এছাড়া দাম কমতে পারে-মাখন, পোড়ামাটির প্লেট ও পচনশীল উপাদানে তৈরি গ্লাস, প্লেট ও বাটি ইত্যাদি, জাপানের জনপ্রিয় সিফুড স্ক্যালোপ, হোস পাইপ ইত্যাদির। পাশাপাশি জাপানি সিফুড স্ক্যালোপ আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এতে স্ক্যালোপের দাম কমতে পারে। এছাড়া দাম কমতে পারে বিদেশি মাখন, ড্রিংক ইত্যাদির। অন্যদিকে দাম কমতে পারে দেশি শিরিস কাগজের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More