জলাশয় বাঁচলেই ঢাকা বাঁচবে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ঢাকার জলাশয় বাঁচলেই ঢাকা বাঁচবে, জলাধার পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘ঢাকার খালগুলো উদ্ধারে যে কাজ শুরু হয়েছে তার সুফল পাচ্ছে ঢাকাবাসী। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারে ভরা বর্ষা মৌসুমেও ঢাকার জলাবদ্ধতা কম ছিলো। আমরা ঢাকার জেলা প্রশাসককে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ঢাকার ৪০ টি পুকুর পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি।’

নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম- বাংলাদেশ (ইউডিজেএফবি) আয়োজিত ‘ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক নগর সংলাপ এবং বেস্ট আরবান রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড- ২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি মতিন আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক দেশ রূপান্তরের সম্পাদক কামাল উদ্দিন সবুজ, ইউএনডিপি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার ইয়ুগেশ প্রাধানাং।

আরও বক্তব্য রাখেন বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান, স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল্লাহ , নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি অমিতোষ পাল, সংগঠনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ হেলিমুল আলম প্রমুখ।

এবারের বেস্ট আরবান রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ডে ৫টি ক্যাটাগরিতে ৬ জন সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হয়। প্রিন্ট ও অনলাইন ক্যাটাগরির মধ্যে নগর পরিকল্পনায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের স্টাফ রিপোর্টার মো. জাহিদুল ইসলাম; সেবা ও জনদুর্ভোগ বিষয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের রিপোর্টার রাহাত হোসাইন এবং সেবা সংস্থার অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে ডেইলি সানের স্টাফ রিপোর্টার রাশিদুল হাসান।

টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার কেফায়েতুল্লাহ চৌধুরী শাকিল ও এখন টিভির স্টাফ রিপোর্টার দেলোয়ার হোসাইন দোলন, এবং অনুসন্ধানী ক্যাটাগরিতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের নাজমুল সাঈদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যখন জনগণের সচেতন থাকে, একতাবদ্ধ থাকে তাহলে জলাধার রক্ষা কঠিন কিছু নয়। আমরা দেখেছি ভোলাগঞ্জের পাথর চুরির বিরুদ্ধে জনগণের একতাবদ্ধের কারনেই আমরা তা ঠেকাতে পেরেছিলাম। মূল্যবোধের জায়গায় আমরা কাজ করছি কিন্তু লিগ্যাসিতে আমরা পিছিয়ে আছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার সময়ে এখন পর্যন্ত কোনো বনভূমি কাটবার অনুমতি দেইনি। অনেক জায়গায় আগের সরকার বন কাটার অনুমতি দিয়ে গেছে।’

উপদেষ্টা ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এর বিষয়ে বলেন, ‘ড্যাপে সাধারণ জলাশয় বলে কিছু থাকবে না। জলাশয় মানেই জলাশয়। আমরা ড্যাপ সংশোধন করে জলাশয়ে কোনো প্রকারভেদ রাখিনি এবং কোনোভাবেই জলাশয় ভরাট করা যাবে না। আমরা হাওর সুরক্ষা আদেশ চূড়ান্ত করলাম। হাওরের মধ্যে হাউজবোট কিভাবে চলবে, কৃষি কাজ কিভাবে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।’

মূল প্রবন্ধে বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক রিকল্পনাবিদ ড. মু. মুসলেহ উদ্দীন হাসান বলেন, ‘রাজধানীর জলাধার উদ্ধার করতে রাজউক ও সিটি করপোরেশন যৌথ উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জমি উদ্ধার হয়েছে এবং খাল-নদী দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের অভিযান চলছে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দখল, পরিকল্পনার ঘাটতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জলাধার রক্ষায় সরকারি অঙ্গীকার, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি, নইলে ঢাকার পরিবেশ ও নগর জীবন আরও বিপর্যস্ত হবে।’

বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘রাজউকের নিজের কাছেও ঢাকার পুকুরের সঠিক তালিকা নেই। জিআইএস ম্যাপ অনুযায়ী পুকুর, জলাধারের তালিকা করতে হবে। এই তালিকা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।’

স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিবেশ ও নগরায়ন সম্পাদক স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান বলেন, ‘ড্যাপের মাধ্যমে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে প্রায় ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাতে উন্নয়ন করতে চায়, তারা হাউজিং কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দিতে চায়। অপরিকল্পিত নগরায়নকে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে এর মাধ্যমে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More