দেশে করোনায় সরকারি তথ্যের ৫ গুণ বেশি মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনা মহামারিতে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা সরকারের দেয়া সংখ্যার চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি বলে জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির এ তথ্য সঠিক বলছেন দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরাও। তবে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। একইভাবে সারা বিশ্বে করোনা সংক্রমণজনিত অসুস্থতায় এক কোটি ৪৯ লাখ মানুষ মারা গেছে বলে দাবি করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। যদিও এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ড করা মৃতের সংখ্যা ৬০ লাখ।
ডব্লিউএইচও-এর দেয়া তথ্যে দাবি করা হয়, অনেক দেশই প্রকৃত মৃতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি। সংস্থাটি বলছে, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটিতে ভারতেই অন্তত ৪৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা সে দেশের সরকারের দেয়া সংখ্যার চেয়ে ১০ গুণ বেশি।
এদিকে, শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৬ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৯ হাজার ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। তবে ডব্লিউএইচও-এর হিসাবে এ সংখ্যা পাঁচগুণ বেশি ধরলে দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৫ জনের।
ডব্লিউএইচও বলছে, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল এ বিষয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ করেছে। তারা সরকারিভাবে দেয়া তথ্য ও স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেছে। একই সঙ্গে তারা পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করেছে। তবে ডব্লিউএইচও যে পদ্ধতি ব্যবহার করে করোনায় মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে তার কঠোর সমালোচনা করেছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ শুক্রবার পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ডব্লিউএইচওর মহাসচিব তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেন, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে। এটি যে কেবল মহামারির ক্ষয়ক্ষতিই আমাদের সামনে তুলে ধরেছে, তা নয়। বরং এ ধারণা দিচ্ছে, যদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আরও উন্নত হতো, সে ক্ষেত্রে অনেক কম মৃত্যু দেখতে হতো আমাদের।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহামারির দুই বছরে করোনায় মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হয়েছে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশগুলোয়। এসব দেশে মৃত্যুর শতকরা হার ৫৩ শতাংশ। এ ছাড়া উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশসমূহে মৃত্যুর শতকরা হার ২৮ শতাংশ ও উন্নত দেশসমূহে এ হার ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া করোনাজনিত অসুস্থতায় মৃতদের মধ্যে পুরুষদের হার বেশি-৫৭ শতাংশ। নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ৪৩ শতাংশ।
করোনায় প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানতে ডব্লিউএইচও-এর এ প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তা সামিরা আসমা। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এটি মর্মান্তিক। এ সংখ্যা বিস্ময় জাগানোর মতো। আমাদের নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ডব্লিউএইচও-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী মিসরে সাড়ে ১১, পাকিস্তানে আট ও ইন্দোনেশিয়ায় সাতগুণ বেশি মারা গেছে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে। তবে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা নিয়ে নতুন করে কোনো তথ্য জানায়নি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More