শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ পরোক্ষ ধূমপান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে জরুরি সংস্কারের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার:বাংলাদেশে ১৫ বছরের নিচে প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছে। এই উদ্বেগজনক তথ্য সামনে এনে তরুণ চিকিৎসকরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত ও কঠোরভাবে সংশোধনের আবেদন জানিয়েছেন। তাদের মতে, জনসমাগমস্থল ও গণপরিবহনে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান না তুলে দিলে শিশু ও তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

পরোক্ষ ধূমপান বলতে বোঝানো হয় ধূমপায়ীদের কাছাকাছি অবস্থান করে ধোঁয়ার শ্বাস নেওয়া। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে, কারণ তাদের শরীর এখনও সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি। দীর্ঘমেয়াদে এই ধোঁয়া ফুসফুসের সমস্যা, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন অসুস্থতার কারণ হতে পারে।

গত বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা: তরুণ চিকিৎসকদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুদের অধিকার ও স্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন অপরিহার্য।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “তামাক এমন একটি নীরব ঘাতক, যা প্রতিদিন শত শত প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। ধূমপায়ী ছাড়াও আশপাশের নিরীহ মানুষরা এই বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, “৬১ হাজারের বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে রোগে আক্রান্ত হওয়া খুবই উদ্বেগজনক। জনসমাগমের স্থান এবং গণপরিবহনে ধূমপান বন্ধ করার জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো পুরোপুরি তুলে দেওয়া এখন সময়ের দাবি। তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিও বন্ধ করতে হবে, কারণ তা তরুণদের ধূমপানে প্রলুব্ধ করে।”

ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন, প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক, গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভের তথ্য তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সি ছেলেদের ৯.২ শতাংশ এবং মেয়েদের ২.৮ শতাংশ ধূমপান করে। অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী ঘর বা পাবলিক স্থানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। তামাক কোম্পানির ডিজিটাল মাধ্যমে তরুণদের টার্গেট করে বিপণন অত্যন্ত আগ্রাসী, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নেশার জালে ফেলছে।”

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, “প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে দেশে এক লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। এই মৃত্যুর ধারা বন্ধ করতে হলে দ্রুত আইনি সংস্কার করা জরুরি। তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষাই এখন রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।”

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও কঠোর বাস্তবায়ন দেশের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে অপরিহার্য। শিশু ও তরুণদের সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে, পাবলিক স্পেস থেকে ধূমপানের নিষিদ্ধ এলাকা কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি তামাক কোম্পানির বিপণন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রকে আরও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

পাঠকের জন্য গুরুত্ব: পরোক্ষ ধূমপান শিশুদের ফুসফুস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যা তাদের সার্বিক বিকাশ ও ভবিষ্যৎ প্রভাবিত করে। আইনগত সংস্কার ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব। সমাজের সচেতনতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তামাকমুক্ত ও সুস্থ থাকে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More