ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানবে বুধবার : ৪-৫ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

উপকূলে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত লোকজনকে নেয়া হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’। আবহাওয়া অফিসসূত্রে বলা হয়েছে, এটি আগামীকাল ভোরে আঘাত হানতে পারে। স্থায়িত্ব হতে পারে বিকেল পর্যন্ত। এসময় ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সংলগ্ন এলাকায় বয়ে যেতে পারে প্রবল ঝড়, হতে পারে ভারি বৃষ্টিপাত। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ অতিপ্রবল রূপ নিয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিলো। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সুন্দরবন অংশ অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের স্থলভাগে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে আম্ফানে ক্ষতি কম হবে। তবে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবর্তন হয়ে সুন্দরবন ছাড়া দেশের অন্য অংশে আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, স্থলভাগে আঘাতের সময় আম্ফানের গতিবেগ থাকবে ১৪০-১৬০ কিলোমিটার। আম্ফান আঘাত হানার এখন যে লোকেশন আছে, তা হলো- পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের যে সীমান্ত আছে সুন্দরবনের, সেটাকে সেন্টার ধরা হয়েছে। তবে এটা পরিবর্তন হতে পারে। এখনো যেহেতু সময় আছে।’
এদিকে বিকেল ৩টার তথ্য বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদফতর মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি-সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে। উল্লেখ করা হয়, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি-সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলায় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে গতকাল বিকেল থেকেই সমুদ্রোপকূলের লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় নেওয়া শুরু হয়।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষার জন্য উপকূলের ৫১ লাখ ৯০ হাজার মানুষের জন্য ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি বিষয়ে অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। এদিকে গতকাল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, মোংলা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রশাসন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি সর্বক্ষণ মনিটরিং করা হচ্ছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ করছি। এসময় যারা ছুটিতে আছেন, তাদের ছুটি বাতিলসহ কর্মস্থলে থাকা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল গণমাধ্যমকে জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গতকাল বিকেল থেকে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া শুরু হয়। কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে এ ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ আসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের ৫ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ লাখের মতো মানুষকে রাখা যাবে। চট্টগ্রামে ৩ হাজার ৯৯৮টি ও পটুয়াখালীতে ৭২২টি আশ্রয় কেন্দ্র আগেই প্রস্তুত করা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More